বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকিং একটি উন্নততর, টেকসই ও সম্ভাবনাময় ব্যবস্থা হিসেবে সারা বিশ্বে সমাদৃত। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এই কল্যাণমুখী ব্যাংকব্যবস্থার প্রতি এ দেশের মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে দশটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক রয়েছে। পাশাপাশি প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর ৮০টির মতো শাখা ও উইন্ডো ইসলামী ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। আমানত ও বিনিয়োগের প্রায় ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ইসলামী রীতিতে। মোটাদাগে বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকগুলো তাত্ত্বিক ও পরিচালনগত সাফল্য অর্জনে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। দ্রুত বিকাশমান এই ব্যবস্থাকে আরো গতিশীল, টেকসই ও বেগবান করার ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির বিকল্প নেই। এর জন্য প্রয়োজন গণসচেতনতা ও সমর্থন। বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের গণভিত্তি রচনার ক্ষেত্রে এর সব ধরনের লিটারেচারকে মাতৃভাষায় রূপান্তর করা জরুরি। কেননা, ইসলামী ব্যাংকিং কর্মকা-ে যেসব শব্দ ও পরিভাষা ব্যবহৃত হয় তার অধিকাংশই আরবিতে। ফলে বাংলাভাষী সাধারণ মানুষের কাছে ইসলামী ব্যাংকিং পরিভাষার সুস্পষ্ট ধারণা নেই। আবার ইংরেজি শিক্ষিতরা ইসলামী ব্যাংকিং পরিভাষা বুঝতে ইংরেজির শরণাপন্ন হন। এতে করে অনেকের কাছে ইসলামী ব্যাংকিং পরিভাষার প্রকৃত জ্ঞান অধরাই থেকে যায় । ইতোমধ্যে ইসলামী ব্যাংকিং সম্পর্কে বাংলা ভাষায় অনেক গ্রন্থ রচিত হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু এগুলো ইসলামী ব্যাংকিং পরিভাষার অস্পষ্টতা দূর করার জন্য যথেষ্ট নয়। তাই এসব পরিভাষার স্বচ্ছ ও সুস্পষ্ট ধারণা লাভের জন্য একটি গ্রন্থের প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘ দিন ধরে অনুভূত হয়ে আসছিল। মুহাম্মাদ রহমাতুল্লাহ খন্দকার রচিত ‘ইসলামী ব্যাংকিং ও বাণিজ্যিক পরিভাষা’ শীর্ষক বইটি সে শূন্যতা পূরণের অনন্য প্রয়াস। পরিভাষা রচনা করা মূলত একটি জটিল কাজ। কারণ প্রতিটি পরিভাষার সংজ্ঞা সংক্ষেপে ও স্বল্প শব্দসম্ভারে এমনভাবে প্রণয়ন করতে হয়, যাতে গোটা বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় ফুটে ওঠে। গ্রন্থকার এ কঠিন কাজে নিপুণতার স্বাক্ষর রেখেছেন। আমার জানামতে, সাধারণ ব্যাংকিং পরিভাষা সম্পর্কে বাজারে প্রচুর বই থাকলেও মুহাম্মাদ রহমাতুল্লাহ খন্দকার রচিত ‘ইসলামী ব্যাংকিং ও বাণিজ্যিক পরিভাষা’ শীর্ষক গ্রন্থটি বাংলা ভাষায় রচিত এ বিষয়ের সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ। শুধু ব্যাংকিং পরিভাষার মধ্যেই গ্রন্থকার তাঁর আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখেননি বরং এতে ফিকহুল মু‘আমালার অনেক বিষয় সম্পর্কেই বিস্তারিত আলোচনার অবতারণা করেছেন। এ গ্রন্থের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, প্রতিটি পরিভাষাকে যথার্থভাবে সংজ্ঞায়িত করার পাশাপাশি এর প্রয়োগ ক্ষেত্র, সহজে বোধগম্য করার লক্ষ্যে উপযুক্ত উদাহরণ, প্রয়োজনীয় কুরআন-সুন্নাহ্র দলিল-প্রমাণ যতেœর সাথে তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া গ্রন্থটিতে ফিকহুল মু‘আমালার প্রাচীন ও আধুনিক ব্যাংকিং পরিভাষাগুলো উল্লেখ করার পাশাপাশি শারী‘আহ্র দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলোকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সহজবোধ্য করার জন্য অনেক ক্ষেত্রে আরবি পরিভাষার ইংরেজি প্রতিশব্দও উল্লেখ করা হয়েছে। এতে করে বইটি থেকে ইসলামী ব্যাংকিং ও বাণিজ্যিক বিষয়ের বহুমাত্রিক ধারণা পাওয়া যাবে। এ ছাড়াও বইটিতে অনেক ইস্যু, তত্ত্ব ও তথ্যের উল্লেখ রয়েছে যার সূত্র ধরে গবেষকগণ ইসলামী শারী‘আহ বিশেষ করে ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং বিষয়ে মূল্যবান অবদান রাখতে পারবেন। গভীরতার দিক থেকে বইটি খুবই সমৃদ্ধ। এর ভাষা প্রাঞ্জল ও সাবলীল। বইটি ইসলামী ব্যাংকিংয়ের সাথে জড়িত সকলেরই পড়া উচিত বলে আমি মনে করি। তাছাড়া এই বই পাঠ করে যে কোনো পাঠক ইসলামী ব্যাংকিং সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভে সক্ষম হবেন। আমি আশা করি এ গ্রন্থ ইসলামী ব্যাংকিংয়ের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।