২০১৮ সালের জুলাই মাসের নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায় আসেন ইমরান খান ও তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই। এই নির্বাচন নিয়ে জনমনে তৈরী হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ইমরান ‘নয়া পাকিস্তান’ এর প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসীন হন। বলা হয় ইমরান খানের এই জয়ের পেছনে আছে সামরিক বাহিনীর হাত। এছাড়া পাকিস্তানে সামরিক শাসন বাদে যে কয়বার গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় এসেছে ততবারই সামরিক বাহিনী কাজ করেছে ছায়া সরকার হিসেবে। ইমরান আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নতি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার সাথে শুরু করেন তার শাসন। অভ্যন্তরীণ উন্নতি ও বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইমরান খান বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। কিন্তু ক্ষমতা গ্রহণের সাথে সাথেই আর্থিক দেউলিয়াপনা ও জঙ্গিবাদ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত পাকিস্তানকে টেনে তুলতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। ইমরানের ‘নয়া পাকিস্তান’ প্রতিশ্রুতি নিয়ে মানুষের মনে তৈরী হয় সন্দেহ। ক্ষমতায় এসেই পাকিস্তানকে আর্থিক দেউলিয়াপনা থেকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্র ও আর্থিক সংস্থার সহায়তা নিতে হয় ইমরান খানকে। এজন্য অভ্যন্তরীণ ভাবেও তাকে পরিবর্তন করতে হয় বেশকিছু নীতিমালা। জনতার রোষানলে পড়তে হয় তাকে। আন্তর্জাতিকভাবে ইমরান তালিবানের সাথে আমেরিকার শান্তিচুক্তিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ভারত অবশ্য ইমরান খানের মাধ্যমে পাক-ভারত সম্পর্কে উন্নয়নের কোনো আশা দেখতে পাচ্ছেনা। ‘নয়া পাকিস্তান’ বইটিতে পাকিস্তানের ২০১৮ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে আসিয়া বিবি মামলা, পশতু আন্দোলন, নওয়াজ শরীফের উচ্ছেদ, পাক-ভারত সম্পর্ক, পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্ক, পাকিস্তানের দুর্দিনে ত্রাণকর্তা হিসেবে সৌদিআরব ও আরব আমিরাতের ভূমিকা, জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থান এবং ইমরানের হাতে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। মূলত ভারতের চোখ দিয়ে পাকিস্তান ও ইমরান খানকে দেখা যাবে ‘নয়া পাকিস্তান’ বইয়ে। দেখার বিষয় হলো, ইমরান খান তার ‘নয়া পাকিস্তান’ গড়তে গিয়ে আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক জটিলতা এবং সামরিক বাহিনীর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেন কিনা।