"অব্যর্থ পারিবারিক চিকিৎসা" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ বর্তমানে আমাদের শিক্ষিত সমাজে হােমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শাস্ত্র সম্বন্ধে স্বল্প জ্ঞান সম্পন্ন বহুলােক হােমিওপ্যাথিক ঔষধের প্রকৃত চিত্র হৃদয়ঙ্গম না করে পারিবারিক ও পাড়া প্রতিবেশীদের চিকিৎসায় রত আছেন। তারা ব্যথা পেলে “আৰ্ণিকা” গর্ভ অবস্থায় “পালসেটিলা” বমি হইলে “ইপিকাক” সর্দি কাশিতে “রাসটক্স” পেটের অসুখে “নাক্সভমিকা” ইত্যাদি প্রকারে রােগীতে ঔষধ প্রয়ােগ করে থাকেন। ফলে কোন ক্ষেত্রে কোন রােগীর সহিত কোন ঔষধের মিল থাকলে কৃতকার্য হন এবং আহ্লাদে হােমিওপ্যাথির গুণ কীর্তন করেন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা অকৃতকার্য হন। তৎপর একটির পর একটি ঔষধ ও শক্তি বদল করতে করতে অবশেষে হতাশ হয়ে নানা প্রকার বিরূপ মন্তব্য করেন। এই ব্যর্থতার কারণ হােমিওপ্যাথিক একটি বিরাট বৈজ্ঞানিক তথ্য সম্বলিত চিকিৎসা শাস্ত্র। এই শাস্ত্র সম্বন্ধে মহা-মনিষীদের রচিত বিরাট বিরাট গ্রন্থ হতে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান আহরণ করে সকল রােগীক্ষেত্রে মানসিক ও শারীরিক ভাবে ঔষধ নির্বাচন ও মাত্রা বা শক্তি প্রয়ােগ করে সফলতা আনা আমার মত সাধারণ জ্ঞান সম্পন্ন চিকিৎসকের পক্ষে পঁয়তাল্লিশ বছরেও সম্ভব হয়নি। তাই এই পুস্তকে অতি সহজ সরল ভাষায় সমাজের সকল স্তরের শিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত লােক যারা কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন পেশায় নিয়ােজিত থেকে অবসর সময়ে নিজে নিজে হােমিওপ্যাথিক চর্চা করেন অর্থাৎ পারিবারিক চিকিৎসা করে থাকেন, কিংবা সদ্য পাশ করা চিকিৎসক, অধ্যয়নরত ছাত্র, তাহাদের পক্ষে যাতে মানসিক বা শারীরিকভাবে পুর্ণাঙ্গরূপে সঠিক ঔষধ নির্বাচন করতে না পারলেও অন্তঃত পক্ষে কয়েকটি বিশেষ নির্দিষ্ট লক্ষণের উপর নির্ভর করে ও পার্থক্য নির্ণয় করে মােটামুটিভাবে সঠিক ঔষধ নির্বাচন করতে পারেন তার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি মাত্র। যদি কেহ এই পুস্তকের সহায়তায় এবং মহামান্য হ্যানিম্যানের অনুসৃত মূলনীতি অনুযায়ী লিখিত অন্যান্য মনিষীদের মেটিরিয়ামেডিকা ও অর্গানন পাঠে সঠিক ঔষধ ও মাত্রা নির্বাচন করে রােগীতে সফলতা এনে প্রকৃত হােমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রসার কার্যে সামান্যতম অবদান। রাখতে পারেন তবে আমার দীর্ঘ জীবনের সাধনা সার্থক হয়েছে মনে করব। এই পুস্তকের সূচীপত্রে প্রচলিত রােগের নাম লিখা হয়েছে। কারণসাধারণতঃ মানুষের অসুস্থতায় যে দুই একটি উপসর্গ প্রকাশ পায়, সেই উপসর্গকেই বিভিন্ন রােগের নাম দিয়ে রােগীরা হােমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের নিকট চিকিৎসার জন্য আসেন। কিন্তু হােমিওপ্যাথিতে কোন রােগের চিকিৎসা হয় না, রােগীর চিকিৎসা করা হয়। তাই পাঠক পাঠিকাদের সুবিধার্থে ঔষধ পরিচিতির ক্ষেত্রে রােগকে রােগীতে রূপ দিয়ে ঔষধের বিবরণ লেখা হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের হৃদয়ঙ্গমের জন্য কোন কোন বাক্য বা বিষয়বস্তু বার বার আলােচনা করা হয়েছে। এতদ সত্বেও পুস্তকটিতে কিছু কিছু ভুল থাকা অস্বাভাবিক নয়। তাই পাঠক পাঠিকাগণকে অনুরােধ করছি যে, যদি কোথাও কোন ভুল লক্ষ্য করেন এবং কোথাও আরও কিছু প্রয়ােজনীয় তথ্য ও মূল্যবান লক্ষণ সংযােজন আবশ্যক মনে করেন, তবে পত্র মারফত উপদেশ দিলে চিরকৃতজ্ঞ থাকব। এবং পরবর্তী সংস্করণে তা সংযােজন করে প্রকাশ করতে চেষ্টা করব।