কেন বইটি পড়বেন আমরা সবসময় বড় মানুষদের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জেনে আলোড়িত হই, শিক্ষা গ্রহণ করে থাকি। তাঁদের অনুসরণ করে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে নিই। জীবনী বা আত্মজীবনীমূলক বই পড়ার সবচেয়ে বড় লাভ এটি। পৃথিবী, সমাজ, রাষ্ট্র ও মানুষ নিয়ে আমাদের দৃষ্টিকোণও বদলায়। তাঁদের জীবন থেকে অনুপ্রেরণা নিই। আমরা জানি, অনুপ্রেরণাই সফলতার মূল মন্ত্র। আমরা অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, রাজনীতিক, সফল ব্যক্তি ও যোদ্ধার জীবন ও কর্মের কথা শুনেছি, পড়েছি। এই বইটির প্রত্যেকটি অধ্যায় এমন একজন স্বপ্নবাজ ব্যক্তির জীবনের গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে। রয়েছে তাঁর বেড়ে ওঠা, বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখা, ব্যর্থতা ও সফলতার ইতিহাস। সেই স্বপ্নবাজ সফল ব্যক্তির নাম ইলন রিভ মাস্ক। তবে ইলন মাস্ক নামেই বিশ্বব্যাপী পরিচিত। তাঁকে বলা হয় ‘ইঞ্জিনিয়ারদের ইঞ্জিনিয়ার। বলা হয় “ভিন গ্রহের এলিয়েন, ভুল করে পৃথিবীতে আটকা পড়েছেন, এখন নিজের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য এত্ত সব কীর্তি করে যাচ্ছে”। তিনি একবিংশ শতাব্দীর সফল উদ্যোক্তা। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা-সহপ্রতিষ্ঠাতা। আমরা অনেকেই স্পেসএক্স, টেসলা, পেপ্যাল, সোলার সিটি, স্টারলিংক, হাইপার লুপ, নিউরোলিঙ্ক, ওপেন এআই কিংবা দ্য বোরিং কোম্পানীর নাম শুনেছি। ইলন মাস্কের হাত ধরেই এই প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠে আলোর মুখ দেখেছে। আর এই সবগুলো প্রতিষ্ঠানই সৃষ্টিশীল কাজের উদাহরণ বিশ্বব্যাপী। তিনি ব্যক্তিগতভাবে যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে পৃথিবীর নজরে এসেছে সেটি হচ্ছে স্পেসএক্স, টেসলা মোটরস, পেপ্যাল, সোলার সিটি। ব্যক্তি মালিকানা বাহনে চাঁদে যাওয়ার মতো সাহস তিনিই প্রথম করেছেন। ব্যতিক্রমধর্মী সব চিন্তাধারার কারণে নিজেকে তিনি অন্যদের চেয়ে সম্পূর্ণ রূপে আলাদা করে তৈরি করেছেন। আপনি যদি পৃথিবীকে ভালোবাসেন, মানুষকে ভালোবাসেন কিংবা জীবনে সফল হতে চান তাহলে অবশ্যই বইটি আপনারও ভালো লাগবে। প্রশ্ন জাগতে পারে প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে এর সম্পর্ক কী? হ্যাঁ, সম্পর্ক আছে, আর সম্পর্ক আছে বলেই পৃথিবীময় আলোচনায় উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পর্কে বিস্তারিত বিশোধ বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে এই বইয়ে। এর সাথে আছে ইলন মাস্কের সফলতার সূত্র এবং তরুণদের জন্য তাঁর পরামর্শ। আছে সফলতার সাক্ষাৎকার। ইলন মাস্ক তার প্রতিষ্ঠিত স্পেসএক্স, টেসলা মটরস ও সোলার সিটি নিয়ে বলেন, “আমি যেসব জিনিস নিয়ে কাজ করি তার পেছেনে আছে একটি স্বপ্ন, এমন একটি পরিবর্তিত পৃথিবী চাই, যা হবে আরও মানবিক।” তাঁর স্বপ্ন কল্পনাকেও হার মানায়। তাঁর ইচ্ছা, মানবজাতি ভবিষ্যতে সংগ্রাম মোকাবেলা করতে ভিন্ন গ্রহে বসতি স্থাপন করবে। তাঁর এই ভাবনাটি ‘মেকিং লাইফ মাল্টিপ্ল্যানেটারি’ নামে পরিচিত। পে-প্যালের শেয়ার বিক্রি করে যে অর্থ পেয়েছিলেন তার সবই বিনিয়োগ করেছেন স্পেসএক্স, টেসলা ও সোলারসিটিতে। লক্ষ্য করুন, এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রথমটি হলো মহাশূণ্যের অন্য কোথাও মানববসতি নিয়ে যাওয়ার উপায় উদ্ভাবনের জন্য। আর অন্যদুটি হলো এই পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের চাপ সামলানোর উপায় উদ্ভাবনের জন্য। কারণ, বৈদ্যুতিক মোটরগাড়ি জ্বালানি তেল ব্যবহার করে না বলে এতে কার্বন নিঃসরণ খুব কম হয়, পরিবেশ বাঁচে। আর সোলারসিটি হলো নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে এই পৃথিবীতে মানুষের বেঁচে থাকার উপযুক্ত পরিবেশ রক্ষার সাহায্য করার জন্য। যেন মানুষ আরও বেশি, অন্তত আরও কয়েক শ বছর বেশি বেঁচে থাকার উপযোগী পরিবশে পায়। এই বইতে ইলনের এই তিনটি প্রকল্প নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই বইয়ের প্রধান ফিচার হচ্ছে স্পেসএক্স, টেসলা, সোলার সিটি। মাস্ক ভাবছিলেন, অন্তত মঙ্গল গ্রহে যদি গাছপালা জন্মানো যায়, তাহলে সেখানে মানববসতি গড়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু তিনি দেখলেন, সেখানে কম খরচে যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে না পারলে কিছুই হবে না। সে জন্যই তাঁর স্পেসএক্স। রোলিং স্টোন ডটকম নামে একটি মিডিয়াকে তিনি বলেন, ‘আমি প্রয়োজনীয় কিছু করতে চাই। এবং প্রয়োজনীয় কিছু মানে এমন কিছু, যা মানুষের জীবনকে ‘আরও একটু’ ভারো করবে। ভবিষ্যতকে আরও একটু ভালো করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎকে আরও ভালো করার জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে।’ এবার বুঝতে পেরেছেন স্পেসএক্স, সোলারসিটি ও টেসলা মোটরস- এর সাথে পৃথিবীর শান্তি ও ভালোবাসার সম্পর্ক কোথায়? ইলন মাস্ক নামের এই মহান মানুষটির মাথা থেকে যে চিন্তাগুলো বের হয়েছে সেগুলো আমাদের এবং আমাদের পৃথিবীর জন্য কতটুকু প্রয়োজনীয়? এছাড়া আমাদের বোঝার বাকি রইল না যে, ইলন মাস্কের স্বপ্নগুলো সত্যি হলে আমরা এই পৃথিবীতে কোনো রকম বিপদ ছাড়া আরও বহু শতাব্দির পর শতাব্দি বেঁচে থাকতে পারবো। এখন একটাই প্রশ্ন, কিভাবে সম্ভব ইলন মাস্কের স্বপ্ন ও ইচ্ছা সত্যি ও বাস্তবায়ন করা যায়? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি নিজেই ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘যদি আমরা বৈশ্বিক উঞ্চায়ন রোধে কাজ করতে পারি, বাতাস যদি আরেকটু পরিষ্কার রাখতে পারি, যদি মাটি খুঁড়ে কয়লা-তেল-গ্যাস আর না তুলতে থাকি। আর ওগুলো তো শিগগিরই শেষ হয়ে যাবে। তাই আরও একটু ভালো ভবিষ্যতের জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে। আমরা তো এখন, অন্তত এই সময়কালে, অন্যান্য গ্রহে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করছি না। আমাদের থাকার একটাই গ্রহ, এই পৃথিবী। এটা আমাদেরই অবিবেচক কর্মকাণ্ডের জন্য, অথবা অন্য কোন গ্রহাণুর সংঘর্ষে ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে মানবসভ্যতাও ধ্বংস হয়ে যাবে। যেমন নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল ডাইনোসরের প্রজাতি। আমরা যদি তেলাপোকা বা ব্যাঙের ছাতা না হয়ে থাকি, তাহলে আমাদের বারোটা বাজতে আর বাকি নেই। তাই ভালো ভবিষ্যতের জন্য কিছু করার এখনই সময়।’