আধুনিকতম সাহিত্য এবং দর্শনের পটে জাঁ পল সার্ত সম্ভবত: বিস্ময়কর এবং সবচেয়ে শ্রদ্ধাবহ একটি চিহ্ন। জীবন, মনন এবং ব্যক্তি-এই তিনের বিচিত্র সমন্বয়ে বিতর্কিত অস্তিত্ববাদের এক চূড়ান্ত অবয়ব তাঁর সমগ্র সাহিত্য আর দার্শনিক প্রয়াসে উচ্চকিত এবং উচ্চারিত। তাঁর দর্শনই ফরাসি অস্তিত্ববাদ। তিনি ১৯০৫ সালে প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। লেখাপড়ার পাট প্যারিসেই সম্পন্ন হয়। ১৯২৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর তিনি দর্শনের শিক্ষকতায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৩৪ সালে বার্লিনে ফ্রেঞ্চ ইনস্টিটিউটে বছরখানেক ছিলেন, তখনই আধুনিক জার্মান দার্শনিকদের সঙ্গে পরিচিত হন। অতঃপর শিক্ষকতা করেন প্যারিসের লিসে কনদোর্সে। যুদ্ধকালীন প্রতিরোধ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা ছিল সার্তের। পরবর্তীকালে শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে লেখাকেই জীবনের একমাত্র বৃত্তি হিসেবে গ্রহণ করলেন। তখন থেকে লে টেম্পস মডার্নস (Modern Times) পত্রিকার সম্পাদনা শুরু করেন। তাঁকে ফরাসি অস্তিত্ববাদের জনক বলা হয়ে থাকে। এই অস্তিত্ববাদের উৎসরণ হয় মানুষের আত্ম-চেতনা থেকে। উচ্চমার্গ দর্শনের নিরবচ্ছিন্ন আবর্তে ব্যক্তিত্ব যখন চরম সংকটের সম্মুখীন, তখনই সার্তের কাছে ধর্ম, সমাজ, ঈশ্বর সর্ব মেকীতে পরিণত হলো-ব্যক্তিত্ব, ব্যক্তি-শক্তি পরিণত হলো এক প্রচণ্ড শক্তিতে।
জঁ-পল সার্ত্র (ফরাসি: Jean-Paul Sartre) (২১শে জুন, ১৯০৫-১৫ই এপ্রিল, ১৯৮০) ফরাসি অস্তিত্ববাদী দার্শনিক, নাট্যকার, সাহিত্যিক এবং সমালোচক। তিনি ছিলেন অস্তিত্ববাদ ও প্রপঁচবিজ্ঞানের দর্শনে একজন পথিকৃৎ ও বিংশ শতকের ফরাসি দর্শন ও মার্ক্সিজমের অন্যতম প্রভাবশালী দার্শনিক। জঁ-পল সার্ত্র তার কাজের মাধ্যমে সমাজবিজ্ঞান, সাহিত্যতত্ত্ব, উত্তর উপনিবেশবাদি তত্ত্ব ও সাহিত্য গবেষণায় ব্যপক প্রভাব বিস্তার করেছিলে। ফরাসী লেখিকা সিমোন দ্য বোভোয়ারের সাথে সার্ত্র-এর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল; তারা পরস্পর বন্ধনহীন প্রেমে আবদ্ধ ছিলেন। জঁ-পল সার্ত্র ১৯৬৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হন তবে এই পুরস্কার গ্রহণে তিনি অস্বীকৃতি জানান; কারণ তার মতে একজন লেখককে কখনই নিজেকে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে দেওয়া উচিত নয়।