বইয়ের ব্যাক পেইজে লিখা ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা উপন্যাস হিসেবে এবং মাকে নিয়ে লেখা উপন্যাস হিসেবে আনিসুল হকের মা যে-কোনাে সময়ের একটি প্রধান উপন্যাসের মর্যাদা লাভ করবে বলে আমার মনে হয়।’ আনিসুজ্জামান
‘আমি বলি দুই মা। ম্যাক্সিম গাের্কির মা আর আনিসুল হকের মা। .. এই দুই মা যথার্থ মা হয়ে উঠেছেন আমার কাছে।’ সরদার ফজলুল করিম
‘অনেক পরিশ্রমের সঙ্গে আনিসুল হকের ভালােবাসাটুকু যুক্ত হয়েছিল বলে এটি এত সুন্দর একটা বই হয়েছে। বইটি পড়তে পড়তে আমার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠেছিল। ১৯৭১ সালের স্মৃতি বারবার ফিরে আসছিল; এ দেশের লাখ লাখ মায়ের দীর্ঘশ্বাস আমি আবার শুনতে পেয়েছিলাম।’ মুহম্মদ জাফর ইকবাল
‘সকালে ঢাকায় বৃষ্টি হচ্ছিল। বইটি আমার হাতে। মনের অজান্তে বইটি থেকে চোখ তুলে ১৯৮৫ সালের ৩১ আগস্টের জুরাইন কবরস্থানে চলে যাচ্ছিলাম। আমার চোখও বার বার ঝাপসা হয়ে উঠছিল। প্রায় ৩০ বছর আগে ম্যাকসিম গাের্কির মা উপন্যাসটি পড়ে কৈশােরিক দুরন্ত সাহস অর্জন করেছিলাম, আজ আনিসুল হকের ‘মা’ উপন্যাসটি পড়ে নিজেদের ইতিহাসের বিস্মৃতির লীলায় প্রৌঢ়ত্বের বুকে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।' শেখর ইমতিয়াজ
‘One of the best novels of Indian sub-continent. It made my eyes watery. Perhaps the success lies behind the strong theme of humanity.’ সরােজিনী সাহু
“মা” বইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপে লিখা আজাদ ছিল তার মায়ের একমাত্র সন্তান। আজাদের বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করায় বালক আজাদকে নিয়ে তার মা স্বামীর গৃহ-অর্থ-বিত্ত ত্যাগ করে আলাদা হয়ে যান। মা বড় কষ্ট করে ছেলেকে লেখাপড়া করান। আজাদ এমএ পাস করে। এই সময় দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। আজাদের বন্ধুরা যােগ দেয় ঢাকার আরবান গেরিলা দলে। আজাদ মাকে বলে, আমিও যুদ্ধে যাব। মা তাকে অনুমতি দেন। ছেলে যুদ্ধে যায়। ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট একরাতে ঢাকার অনেক ক’টা মুক্তিযােদ্ধা-নিবাসে হামলা চালায় পাকিস্তানী সৈন্যরা, আরাে অনেকের সঙ্গে ধরা পড়ে রুমী, বদি, আলতাফ মাহমুদ, জুয়েল এবং আজাদ। আজাদের ওপর পাকিস্তানীরা প্রচণ্ড অত্যাচার চালিয়েও কথা বের করতে পারে না। তখন তার মাকে বলা হয়, ছেলে যদি সবার নাম-ধাম ইত্যাদি বলে দেয়, তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। আজাদের মা ছেলের সঙ্গে দেখা করেন এবং বলেন, শক্ত হয়ে থেকো, কারাে নাম বলে দিও না। আজাদ বলে, মা দুদিন ভাত খাই না, ভাত নিয়ে এসাে। মা পরের দিন ভাত নিয়ে হাজির হন বন্দিশিবিরে, কিন্তু ছেলের দেখা আর মেলে না। আর কোনােদিনও ছেলে তার ফিরে আসে নাই আর এই মা আর কোনােদিনও জীবনে ভাত খান নাই। যুদ্ধের ১৪ বছর পরে মা মারা যান, নিঃস্ব, রিক্তবেশে। মুক্তিযােদ্ধারা তাঁকে কবরে শায়িত করলে আকাশ থেকে ঝিরঝির করে ঝরতে থাকে বৃষ্টি। মুক্তিযােদ্ধাদের কাছে এই কাহিনীর সন্ধান পেয়ে আনিসুল হক বহুজনের সাক্ষাৎকার নিয়ে, বহু দলিল-দস্তাবেজ ঘেঁটে রচনা করেছেন অসামান্য এক উপন্যাস, জানাচ্ছেন এক অসমসাহসিকা মায়ের অবিশ্বাস্য কাহিনী। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, যতদিন স্বাধীনতা থাকবে, এই অমর মাকে ততদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে হবে আমাদের।
আনিসুল হক, বাংলাদেশে গত শতাব্দীর আশির দশকে আবির্ভূত হওয়া একজন প্রখ্যাত কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাংবাদিক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গদ্যকার্টুন, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনী, শিশুসাহিত্যসহ সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে রয়েছে তার সাবলীল বিচরণ। বর্তমানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক এবং কিশোর আলোর সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। আনিসুল হকের জন্ম ১৯৬৫ সালের ৪ মার্চ নীলফামারীতে। শিশু মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক বাবার অনুপ্রেরণায় ছোটবেলা থেকেই আগ্রহ জন্মেছিলো লেখালেখি আর ছবি আঁকায়। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন প্রথম কবিতার বই ‘খোলা চিঠি সুন্দরের কাছে’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। আনিসুল হক এর বই প্রকাশের কালটি ছিলো উত্তাল স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের সময়। আনিসুল হক এর বই সমূহ প্রেমের প্রতি পক্ষপাত করলেও একইসাথে সেসময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার চিত্রও ফুটিয়ে তুলেছে। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘আমি আছি আমার অনলে’, ‘আসলে আয়ুর চেয়ে বড় সাধ তার আকাশ দেখার’, এবং ‘জলরংপদ্য’। মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘মা’, আনিসুল হক এর বই সমগ্র এর মধ্যে পাঠকের মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছিল। এছাড়াও ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’, ‘নিধুয়া পাথার’, ‘আয়েশামঙ্গল, খেয়া’, ‘ফাঁদ’, ‘বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম’, ‘ভালোবাসা আমি তোমার জন্য কাঁদছি’, ‘ফাল্গুন রাতের আঁধারে’ তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। বিভিন্ন স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদকের ভূমিকা পালন করেছেন দীর্ঘদিন, এখনও লিখে যাচ্ছেন পত্রিকার কলাম। লিখেছেন বেশ কিছু টেলিভিশন নাটক ও সিনেমার চিত্রনাট্যও। কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন বাংলা সাহিত্যের আধুনিক এই লেখক।