লোকবিশ্বাস হচ্ছে লোকসংস্কৃতির একটা মূল উপাদান। লোকসংস্কৃতি লোকজীবনের হাসি-কান্না, আশা-আকাক্সক্ষা, ধর্মীয় বিশ্বাস, সংস্কার-কুসংস্কার ইত্যাদি বিভিন্ন অভিজ্ঞতার পুষ্ট। লোকবিশ্বাস সম্পর্কে বলা যায়, জীবনচর্যার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় নানান ধরনের অনিশ্চয়তা, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থেকে লোকসমাজে যে বিশ্বাসগুলোর জন্ম হয়ে বংশ পরস্পরায় আজও লালিত হচ্ছে তাই লোকবিশ্বাস। আমাদের সমাজ জীবনে নানা ধরনের সংস্কার, কুসংস্কার ও লোকাচার সুদীর্ঘকাল ধরে গভীর বিশ্বাসের সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে। ম্রো সমাজে এমন একজন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, যিনি কোনোরূপ প্রচলিত লোকবিশ্বাস না মেনেই জীবন পার করেছেন। আমাদের সভ্যতা বিনির্মাণেও লোকসংস্কৃতির অবদান অনস্বীকার্য। লোকজসংস্কৃতির হাত ধরেই নির্মিত হয়েছে আধুনিক ও পরিশীলিত সংস্কৃতি। অবশ্যই লোকজ সংস্কৃতিতে কুসংস্কার নির্ভরতা লক্ষ করার মতো। জাদুবিশ্বাস, অদৃষ্টবাদিতাও আমাদের লোকসংস্কৃতির একটি বড় উপাদান। এই লোকবিশ্বাসের সঙ্গে সুদূর অতীতের টোটেম, ট্যাবু ও জাদুবিদ্যার সম্পর্ক অতি নিবিড়। সংকট-শঙ্কা-অমঙ্গল দূরীকরণের পন্থা-পদ্ধতির সঙ্গে লোকবিশ্বাস ও সংস্কারের গভীর যোগসূত্র রয়েছে। রাতে কুকুর-বিড়ালের কান্না অশুভ, শরীরে নীল প্রজাপতি বসলে প্রেমে পড়ে, জোড়া খঞ্জন পাখি দর্শনে বিবাহ লাভ হয়, কালো বিড়াল অশুভ আত্মার বাহক, রাতে মোরগ ডাকলে গৃহে অমঙ্গল হয়, মাথায় মাথায় ঢুস লাগলে মাথা ভেদ করে শিং গজাবে এই ভয়ে মাথায় মাথায় আবার ঢুস দেওয়া ইত্যাদি। ম্রো প্রচলিত সংস্কার, লোকাচার ও লোকবিশ্বাসের উল্লেখযোগ্য বিবরণই এ গ্রন্থের মূল প্রতিপাদ্য। বিধৃত সংস্কার, লোকাচার ও লোকবিশ্বাসের অনেকগুলোর অস্তিত্ব এখন হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। হারিয়ে যাওয়া সেই বিষয়গুলো গ্রন্থভুক্ত করে রাখতেই এ গ্রন্থের জন্ম। এ গ্রন্থ পড়ে কেউ যদি উপকৃত হয় তাহলে পরিশ্রম স্বার্থক মনে করব। সিংইয়ং ম্রো ২৬ মার্চ ২০২০