‘বঙ্গবন্ধু’ খেতাবটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালি জাতির শ্রদ্ধা ও সীমাহীন ভালোবাসা। ‘বাংলা’ ও ‘বঙ্গবন্ধু’ এক ও অবিচ্ছেদ্য। এ কারণেই ‘জয় বাংলা’ শব্দ উচ্চারণ করার পরে ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ না-বললে বাঙালি জাতির অন্তরের আবেগ মুক্তি পায় না। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের জাতির পিতা, শোষিত মানুষের মহান নেতা, শেখ মুজিবুর রহমান একদিনেই ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে ওঠেননি। তাঁর ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে ওঠার পেছনে আছে দীর্ঘদিনের আপসহীন সংগ্রাম ও কারান্তরালে শারীরিক নির্যাতন ভোগ করার বেদনাবিধুর ইতিহাস। ‘মুক্তিযুদ্ধ’ বাঙালি জাতির গৌরবের অগ্নি-শিখা। বাঙালি জাতি ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্ত ঢেলে এই গৌরবের শিখা প্রজ্বলন করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক জাতির মুক্তিযুদ্ধের কথা লিপিবদ্ধ আছে বটে, কিন্তু বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ অনেক কারণেই সোনালি অক্ষরে লেখা হয়ে থাকবে। পৃথিবীর আর কোনো জাতি এত সংক্ষিপ্ত সময়ে, এত রক্ত আর মৃত্যুর বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেনি। ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে আগামী প্রকাশনীর বিশেষ প্রকাশনা উদ্যোগ বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ সিরিজ। এ সিরিজের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের বিশিষ্ট কবি-লেখক-বুদ্ধিজীভীদের বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত সমুদয় রচনার সংকলন পাঠকের কাছে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমাদের পরিকল্পিত লেখক তালিকায় এমন অনেক বিশিষ্টজন অন্তর্ভক্ত রয়েছেন যাদের স্মরণীয় রচনায় এদেশের মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু উত্তরপ্রজন্মের পাঠকের কাছে ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে স্বদেশের স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাসের বার্তা, বর্তমানের দৃঢ় পথচলা এবং সুন্দর আগামীর বিনির্মাণ সাধন করতে এ সিরিজ বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা মনে করি।
নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানা থেকে আরেকটু ভেতরে মেঘনাপাড়ের গ্রাম পাড়াতলী। কবি শামসুর রাহমানের পৈতৃক নিবাস। তবে জন্মেছিলেন ঢাকা শহরের ৪৬ নম্বর মাহুতটুলির বাড়িতে। তারিখ ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর। দশ ভাইবোনের মধ্যে জেষ্ঠ্য তিনি। ১৯৪৮ সালে যখন তার বয়স মাত্র ১৯ বছর তখন মননের গহীন তল্লাটে কবিতার যে আবাদভূমি গড়ে উঠেছিল, তা কেবল উর্বরই হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে নলিনী।কিশোর গুহের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় প্রথম কবিতা। তারপর দে ছুট। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পেয়েছেন আদমজী পুরস্কার (১৯৬৩), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৯), একুশে পদক (১৯৭৭), সাংবাদিকতার জন্যে পেয়েছেন জাপানের মিৎসুবিশি পদক (১৯৯২), ভারতের আনন্দ পুরস্কার (১৯৯৪) ছাড়াও বহু পুরস্কার। ডিলিট উপাধিতেও ভূষিত হয়েছেন। ‘মর্নিং নিউজ’-এ সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে ১৯৫৭ সালে যে চাকরি জীবন শুরু করেছিলেন, একই পেশায় থেকে ১৯৮৭ সালে দৈনিক বাংলার সম্পাদক পদ থেকে তিনি চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছেন, তবু খেই হারাননি জীবন, সাহিত্য ও কবিতার পাঠ থেকে। মূলত কবি হলেও সাহিত্যে তাঁর কাজ বহুমাত্রিক। অনুবাদ সাহিত্য থেকে গদ্যের বিভিন্ন প্রশাখায় বিচরণ করেছেন তিনি। ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট ৭৬ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।