"আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা"বইটির ভূমিকা: শিক্ষা আমাদের মন ও চিন্তাকে আলােকিত করে আমাদের প্রবেশ করিয়ে দেয় জ্ঞানের জগতে। গবেষণা, জ্ঞানার্জন, পেশায় সাফল্য সবকিছুর জন্যই প্রয়ােজন উচ্চশিক্ষা। বর্তমান বিশ্বে নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স এবং পিএইচডি পর্যায়ে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞানার্জনের পথে এগিয়ে যাওয়ার সুযােগ আছে। সারা বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলােই আমেরিকায় অবস্থিত। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার মান— দুই দিক থেকেই বিশ্বসেরা মানের। কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি এখনাে খুব বেশি নয়। একুশ শতকের প্রথম দশকে আমি যখন পিএইচডি শুরু করি কম্পিউটার বিজ্ঞানের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট আরবানাশ্যাম্পেইনে, তখন যা অবস্থা ছিল, এখন তার চেয়ে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। অথচ বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা অনেক মেধাবী। আমি পেশায় ও নেশায় একজন শিক্ষক আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরুতে শিক্ষার্থী, মাঝে বিজ্ঞানী এবং বর্তমানে অধ্যাপক হিসেবে কাজ করার সুবাদে এখানকার শিক্ষাব্যবস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে খুব কাছে থেকে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। তার ভিত্তিতে বলতে পারি, মূলত সঠিক তথ্যের অভাবেই বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য যথাযথ সুযােগ পাচ্ছে না। উচ্চশিক্ষার জগতে বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার জন্য বহুকাল ধরে কাজ করছি। নানা মাধ্যমে এ নিয়ে লেখালেখি করার পর বহু শিক্ষার্থী উপকৃত হয়েছেন, কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। পাশাপাশি এই লেখাগুলাে একত্রে সংকলন করে সবার কাছে পৌঁছে। দেওয়ার অনুরােধ জানিয়েছেন। তার ভিত্তিতেই এ বই লেখা। এ বইটি কোনাে গাইড বই নয়- এটা পড়ে নানা পরীক্ষায় কীভাবে উচ্চ নম্বর পাওয়া যাবে, তার জন্য বইটি লেখা হয়নি; বরং এ বইটিতে ধাপে ধাপে আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা পদ্ধতি, ভালাে বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে সফলভাবে আবেদন করতে হয় এবং কীভাবে পিএইচডি ও মাস্টার্স পর্যায়ে পড়ালেখা ও গবেষণায় সাফল্য অর্জন করা যায়, তার ওপরে আলােকপাত করা হয়েছে। বইটি কাদের জন্য: এ বইটি মূলত যারা আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর তথা মাস্টার্স ও পিএইচডি লেভেলে পড়াশােনা ও গবেষণা করতে চান, তাদের জন্য লেখা। আমি বিজ্ঞানের শিক্ষক বলে এখানে মূলত বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে উচ্চশিক্ষার দিকে আলােকপাত করা হয়েছে, কিন্তু বইতে বলা কায়দাগুলাে মােটামুটিভাবে সব বিষয়ে বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, প্রকৌশল, বাণিজ্য সব বিষয়েই উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রযােজ্য। যেহেতু মােটা দাগে আমেরিকার সব বিশ্ববিদ্যালয়েই উচ্চশিক্ষায় ভর্তি এবং পিএইচডি/মাস্টার্স করার প্রক্রিয়াটি কাছাকাছি রকমের, তাই সব বিষয়ের শিক্ষার্থীদেরই বইটি কাজে আসবে বলে আমার বিশ্বাস। বইটা কীভাবে পড়বেন: বইটি ভাগ করা হয়েছে চারটি অংশে। প্রথম অংশে আলােচনা করা হয়েছে উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব, আমেরিকায় উচ্চশিক্ষাব্যবস্থা কী রকম এবং কেন সেটা বিশ্বসেরা, তার ওপরে। এর পরে দ্বিতীয় অংশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি, আবেদন-প্রক্রিয়ার নানা তথ্য ও কায়দাকৌশল এবং সফলভাবে পিএইচডি বা মাস্টার্সে ভর্তির ওপরে নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় অংশে আলােচনা করা হয়েছে পিএইচডি বা মাস্টার্স পর্যায়ে সফলভাবে পড়াশােনা ও গবেষণা করার নানা কৌশল নিয়ে। সবশেষের অংশে আলােচনা করেছি পিএইচডি-পরবর্তী সময়ে চাকরি খোঁজা ও ক্যারিয়ার গড়া নিয়ে। প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে কিছু কাজের তালিকা আছে- সে অধ্যায়টি পড়ার পরে যে কাজগুলাে শুরু করে দিতে পারেন, তা নিয়েই এই তালিকা। আর পুরাে বইটির শেষে একটি চেকলিস্ট দেওয়া আছে। এই তালিকায় পিএইচডি বা মাস্টার্স পর্যায়ে পড়াশােনার জন্য কোন কাজটি কখন থেকে করবেন, তার একটি সময়কাল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বইটির সঙ্গে সম্পর্কিত সাপ্লিমেন্টারি ম্যাটেরিয়াল পােস্ট করা হবে বইটির ফেসবুক পেজে - https://fb.com/phdinusa < বইটি উৎসর্গ করেছি আমার শ্রদ্ধেয় পিএইচডি অ্যাডভাইজার বা শিক্ষাগুরু প্রফেসর মেরিঅ্যান উইন্সলেটের উদ্দেশে। প্রফেসর উইন্সলেট। আমার পিএইচডির অ্যাডভাইজার ছিলেন। কেবল গবেষণার জগতে নয়, অনেকটা অভিভাবকের মতােই আমার পিএইচডি করার কঠিন সময়টা ভালােভাবে কেটেছে প্রফেসর উইন্সলেটের অসাধারণ পরামর্শ ও দিকনির্দেশনায়। জ্ঞান, বিজ্ঞান ও গবেষণার জগতে আমার পদার্পণের জন্য তার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আশা করছি, এ বইটি আমাদের দেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের কাজে আসবে- এ বইটিতে দেখানাে পথ ধরে শিক্ষার্থী মাস্টার্স ও পিএইচডি গবেষণা ও শিক্ষার জগতে প্রবেশ করবেন এবং লেখাপড়া, গবেষণা ও পেশাগতভাবে সাফল্য অর্জন করবেন। সবার জন্য রইল অশেষ শুভকামনা।
রাগিব হাসানের পৈতৃক বাড়ি জামালপুরে, তবে সরকারি কর্মকর্তা ও স্কুলশিক্ষিকা মায়ের এই মেধাবী সন্তানটির জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। মেধার স্বাক্ষর রেখেছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে। পরবর্তীতে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগে, এবং সর্বোচ্চ মার্কস নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া প্রতিটি বিভাগে ভালো ফলাফলের কারণে পেয়েছিলেন গোল্ড মেডেলও। বুয়েটে কিছুদিন শিক্ষকতা করে আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়ে ছুটে গিয়েছিলেন স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে, এবং এখান থেকেই তিনি পিএইচডি সম্পন্ন করেন। তিনি একাধারে শিক্ষক এবং বিজ্ঞানী, তবে তার আগ্রহের মূল বিষয় কম্পিউটার কৌশল। এর তাড়নায় কম্পিউটার নিরাপত্তা ও ক্লাউড কম্পিউটিং নিয়ে গবেষণা করছেন সিক্রেটল্যাব নামের একটি গবেষণাগার প্রতিষ্ঠানে। এছাড়াও তিনি উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ চ্যাপ্ট্যারের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বর্তমানে তিনি সপরিবারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্মিংহামে বসবাস করছেন, কিন্তু বাংলার সাথে ঠিকই সম্পর্ক বাঁচিয়ে রেখেছেন তার বইগুলোর মাধ্যমে। রাগিব হাসান এর বই মানেই সহজ ভাষায় কঠিন জ্ঞানের কথা। তিনি মূলত লেখেন প্রবন্ধ। রাগিব হাসান এর বই সমূহ এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ‘বিজ্ঞানীদের কান্ডকারখানা’, ‘গবেষণায় হাতেখড়ি’, ‘মন প্রকৌশল স্বপ্ন অনুপ্রেরণা আর জীবন গড়ার ফরমুলা’, ‘বিদ্যাকৌশল: লেখাপড়ায় সাফল্যের সহজ ফরমুলা’ প্রভৃতি। রাগিব হাসান এর বই সমগ্র এর পাশাপাশি তার ব্লগিংও বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের উপকার করছে। তার নিজের ভাষ্যমতে- শিক্ষকতা তার পেশা ও নেশা। তার শিক্ষা তিনি ছড়িয়ে দিতে চান বিশ্বব্যাপী। তাই অনলাইন শিক্ষাদান ওয়েবসাইট শিক্ষক ডট কম গড়ে তুলেছেন। তার এ উদ্যোগ ২০১৩ সালে গুগলের ‘রাইজ’ পুরস্কার লাভ করে। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও উচ্চশিক্ষার প্রচলন করতে চান তিনি। এছাড়াও গবেষণাকর্মে পারদর্শিতার জন্য ‘ক্যারিয়ার’ পুরস্কার লাভ করেন ২০১৪ সালে।