"প্রণয়ে তুমি প্রার্থনা হও"বইটির ভূমিকা: কবিতার প্রতি আমার বিশেষ পক্ষপাত কিংবা দুর্বলতা নেই, যতটা আছে গল্প বা উপন্যাসের প্রতি। এ কথা শুনে আমার পাঠকরা খানিক রুষ্ট হতে পারেন। কারণ তারা অতি আগ্রহ নিয়ে আমার এই সব ছাইপাশ কবিতা পড়েন। তাঁদের নােটবুক, ডায়েরিতে টুকে রাখেন। প্রিয়তম মানুষকে আবৃত্তি করে শােনান। তাঁদের খাতায়, ফেসবুকে, ছবিতে, রাস্তার পাশের দেয়ালে, খেয়ালে লিখে রাখেন। এসব দেখে আমি বিস্মিত হই। যা এমন অবহেলায়, উপেক্ষায় ফেসবুকের পােস্ট থেকে বই হয় কেবল নথিবদ্ধ করে রাখার উদ্দেশ্যে, তা কী করে এমন অসংখ্য মানুষের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনার কাব্য হয়ে ওঠে! বিষয়টা আমাকে বিস্মিত করে। মন খারাপের কোনাে বিষন্ন সন্ধ্যায় কিংবা অলস দুপুর কিংবা নিঘুম রাত্রিতে চট করে বুকের ভেতর থেকে যে হাহাকারের দীর্ঘশ্বাস, আনন্দের তুমুল উদ্যাপন শব্দে-বাক্যে প্রকাশিত হয় তা কী করে এভাবে অজস্র মানুষের অনুভূতির স্পন্দন হয়ে ওঠে! সেবার এক মেডিকেল কলেজে গিয়ে দেখি দেয়ালজুড়ে লেখা- আমাকে হারাতে দিলে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিতে ছেয়ে যাবে তােমার শহর...'। কলকাতার এক তরুণীকে দেখেছিলাম তার শাড়িজুড়ে লিখে আনতে, “শােনাে কাজল চোখের মেয়ে, আমার দিবস কাটে বিবশ হয়ে তােমার চোখে চেয়ে... এমন অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। যা দেখে চমকে গেছি। বুঝতে পেরেছি, এই লেখাগুলাে আমার অনাদর পেয়েই যেন কোনাে এক অগােচরে অভিমানে পৌঁছে গেছে অসংখ্য মানুষের আদুরে হৃদয়ের অন্দরমহলে। এ এক অদ্ভুত ব্যাপারই বটে! আনন্দময়ও। সম্ভবত এই আনন্দটুকুর জন্যই এই লেখা, এই বই। এর বেশি কিছু চাওয়া নেই আমার। লেখার এই আনন্দটুকুই না হয় প্রাপ্তি হয়ে থাক। বি.দ্র. ভূমিকার ছাইপাশ’ শব্দ নিয়ে আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষী আপত্তি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নিজের লেখা নিয়ে নাকি এমন তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা ঠিক নয়। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা উচিত অন্যের লেখা নিয়ে। এটাই নাকি এই সময়ের ট্রেন্ড! অনেক ভেবে দেখলাম, তার কথা সত্য। আজকাল প্রায় সকলেই নিজের লেখা কিংবা নিজেকে ভাবেন কালজয়ী। আর অন্যকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য। আমারও তাই করা উচিত। কিন্তু করতে গিয়ে দেখলাম, আমার এই ভুল পথ চলাতেই আনন্দ...' আর কে না জানে, আনন্দই আসল! আর সেই আসল আনন্দের উৎস পাঠক। প্রিয় পাঠক, ‘প্রণয়ে। তুমি প্রার্থনা হও’ হয়ে উঠুক আপনাদের প্রভূত আনন্দের উৎস।
স্নাতকোত্তর, নৃবিজ্ঞান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সাদাত হোসাইন নিজেকে বলেন গল্পের মানুষ। তাঁর কাছে চারপাশের জীবন ও জগত, মন ও মানুষ সকলই গল্প। তিনি মনে করেন, সিনেমা থেকে পেইন্টিং, আলোকচিত্র থেকে ভাস্কর্য, গান থেকে কবিতা- উপন্যাস-নাটক, সৃজনশীল এই প্রতিটি মাধ্যমই মূলত গল্প বলে। গল্প বলার সেই আগ্রহ থেকেই একের পর এক লিখেছেন- আরশিনগর, অন্দরমহল, মানবজনম, নিঃসঙ্গ নক্ষত্র, নির্বাসন, ছদ্মবেশ, মেঘেদের দিন ও অর্ধবৃত্তের মতো তুমুল জনপ্রিয় উপন্যাস। ‘কাজল চোখের মেয়ে’, তোমাকে দেখার অসুখ'সহ দারুণ সব পাঠকপ্রিয় কবিতার বই। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বোধ, দ্য শুজ, প্রযত্নের পাশাপাশি' নির্মাণ করেছেন 'গহীনের গান' এর মতো ব্যতিক্রমধর্মী পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও। জিতেছেন জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকার পুরস্কার, এসবিএসপি-আরপি ফাউন্ডেশন সাহিত্য পুরস্কার, পশ্চমিবঙ্গের চোখ সাহত্যি পুরস্কার, শুভজন সাহিত্য সম্মাননা ও এক্সিম ব্যাংক- অন্যদিন হুমায়ূন আহমদে সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯। তাঁর জন্ম ১৯৮৪ সালের ২১ মে, মাদারীপুর জেলার, কালকিনি থানার কয়ারিয়া গ্রামে।