মুসলিম বিশ্বের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে প্রায় প্রতিটি মুসলিম অবগত।বিশাল সাগরের মাঝে চালকহীন দিশা হারা জাহাজের অবস্থা যেমন, মুসলিম জাতির অবস্থাও আজ তেমন।কুফফার শক্তি বিশেষকরে পশ্চিমাদের ক্ষমতার দাপট,প্রভাব-প্রতিপত্তি এত ব্যাপক যে মুসলিম জাতির সোনালী অতীত বিশ্বাস করাও কঠিন হয়ে পড়েছে এখন। সামাজিক, রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক,সামরিক এমনকি চিন্তা ও বুদ্ধিভিত্তিক সকল বিষয়ে পশ্চিমাদের তথাকথিত অগ্রসরতা ও জয়জয়কার দেখে মুসলিম উম্মাহর অনেকে হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করেছে। বহু মুসলিম আজ পশ্চিমাদেরকে বিশ্বের অধিপতি, আদর্শ ও একমাত্রসভ্য জাতি হিসেবে মনে প্রাণে মেনে নিয়েছে। এমন হবার প্রধান কারন হল বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থাকে চিনতে না পারা। আজকের বিশ্ব ব্যবস্থা কী করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিইবা ছিল এর অতীত তা না জানা। বর্তমান বিশ্ব বিন্যাস না বুঝতে পারলে তার বিপরীতে ইসলামি সিস্টেম চালু করা যাবে না কখনোই। কোন কোন স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে আজ আমেরিকা তথা পশ্চিমাদের আধিপত্য টিকে আছে তা নির্ণয় করতে না পারলে উম্মাহরকরণীয় নির্ধারণ করা যাবে না।সামরিক ও রাজনৈতিক আগ্রাসন, অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ এবংসাংস্কৃতিক প্রচার ও প্রসারের ফলে পশ্চিমারা আজকের অবস্থানে আসতে পেরেছে। এই প্রতিটি বিষয় পরস্পরের সাথে ওতপ্রোত ভাবে সম্পর্কযুক্ত। প্রতিটি ফিল্ডে ক্ষমতা অর্জনের পিছনে রয়েছে তাদের প্রতারণা, বর্বরতা ও যুলুমের এক কালো ইতিহাস। আমরা যদি তাদের অবস্থান সনাক্ত করতে না পারি, তাদের হার্ড পাওয়ার ও সফট পাওয়ার চিনতে না পারি তাহলে কখনো ইসলামের সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনা যাবে না। রাজনৈতিক ও সামরিক আগ্রাসন তথা হার্ড পাওয়ার এবং চিন্তা-চেতনা,স্বভাব ও রুচিবোধের পরিবর্তন তথা সফট পাওয়ার সবকিছুই তারা শতাব্দি কাল ধরে আমাদের উপর প্রয়োগ করছে, এবং আমাদের গোলামে পরিনত করে রেখেছে।এই জন্য প্রতিটি মুসলিমের উপর বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থার সামগ্রিক ইতিহাস জানা অত্যন্ত জরুরি হয়েপড়েছে। আমাদের চারপাশের বিশ্ব ব্যবস্থাকে একটি আয়নার সামনে রাখতে হবে। ইতিহাসের আয়ানায় অতীত থেকে এর বর্তমানের দিকে পথ চলাকে দেখতে হবে। এই যাত্রাকে আমরা বলতে পারি ওল্ড ওয়ার্ল্ড অর্ডার থেকে নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডারের দিকে যাত্রা। কী ছিল ইয়াহুদি ও খ্রিষ্টান জাতীর ইতিহাস,কীভাবে আজ পুরো বিশ্ব তাদের হাতের মুঠোই এসেছে, কীভাবেই বা ইসলামের সোনালী ইতিহাস ও খিলাফত নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, কীভাবে আজ আমেরিকা একক পরাশক্তির অধিকারী হয়ে বিশ্ব মোড়লের আসনে আসিন হয়েছে, কীভাবে ধন-দৌলতে, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, সামরিক-কৌশলে পশ্চিমারা অগ্রসর হয়েছে।এগুলো আমাদের জানতে হবে। বিশ্ব ব্যবস্থার প্রতিটি দিককে আলাদা ভাবে বিশ্লেষণ না করে,সকল বিষয়কে একই ফ্রেমে নিয়ে আসা যাতে করে একজন মানুষ সহজেই সামগ্রিক ধারণা লাভ করতে পারে এমন একটি বইয়ের অভাব আমি সব সময় অনুভব করতাম। এমন বই রচনার কাজ সহজ নয়। কেননা প্রতিটি বিষয়ের রয়েছে স্বতন্ত্র ইতিহাস। ইতিহাস আলোচনার একক যাত্রায় সকল বিষয়কে সাথে নিয়ে এগিয়ে চলা খুবই কঠিন। এই কঠিন কাজটি আমাদের জন্য সহজ করেছেন এই বইটির লেখক হেদায়াতুল্লাহ মেহমান্দ। বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থাকে সামগ্রিক ভাবে বিশ্লেষণ করে মুসলিম উম্মাহর কাছে স্বচ্ছ আয়নার মত করে উপস্থাপন করার এক সুন্দর প্রয়াস হল আপনার হাতে থাকা এই বইটি। লেখক খুবই নিপুনতার সাথে ইয়াহুদি জাতীর সূচনা থেকে বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থার পুরো ইতিহাসকে তুলে নিয়ে এসেছেন একই মলাটে। ইতিহাসের আলোচনায় তিনি প্রতিটি ঘটনাকে একে অপরের সাথে সেতু বন্ধন করে এগিয়েছেন।এই পথ চলায় তিনি কোনো বিষয়কে বাদ রাখেননি। শিকড়সন্ধানী গবেষক স্বীয় গবেষণালব্ধ সমৃদ্ধ কন্টেন্টের এই বইটি পাঠকের সামনে উপহার দিয়েছেন। যেন পাঠক নতুন ভাবে বর্তমান বিশ্বকে চিনতে পারে।