তাকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলাটা এমনিতেই অসম্ভবের নামান্তর। আর তার খেলা চর্মচোখে উপভোগের সৌভাগ্যটুকুও হয়নি বলে সে চেষ্টা করতে যাওয়াটাও হতো বাড়াবাড়ি। তবুও তিনি যখন অনন্তলোকে পাড়ি জমালেন, চতুর্দিকে আবেগের উথাল-পাতাল ঢেউয়ের ঝাপটা এসে লেগেছিল সদ্যই কৈশোর পেরোনো এই অনুবাদকের মনেও। প্রশ্নটা জেগেছিল তখনই, কী এমন জাদু দেখিয়েছিলেন ওই মানুষটি, যার আবেশ গোটা বিশ্বকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে তিন যুগেরও বেশি? উত্তরের সন্ধান পাওয়া গেল লেখক ইমতিয়াজ আজাদ ভাইয়ের সৌজন্যে। দিয়েগো ম্যারাডোনার আত্মজীবনী ‘এল দিয়েগো’র খোঁজ জানালেন তিনিই। সঙ্গে পাঠালেন একটি প্রস্তাবও, ‘অনুবাদ করবে বইটি?’ বইখানা ভাষান্তর করতে করতেই তাই চেনা হলো দিয়েগো ম্যারাডোনাকে। বর্ণিল চরিত্রের ম্যারাডোনা ধরা পড়লেন আরও বর্ণময় হয়ে। তার নিজমুখেই জানা হলো শৈশবে ভিয়া ফিওরিতোতে কাটানো দুর্বিষহ জীবন কাহিনী। আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সে তার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরুর গল্পটা কিংবা বোকা জুনিয়র্স-বার্সেলোনা হয়ে নাপোলিতে তার বিশ্ব শাসনের গল্পটাও জানা গেল তার ভাষ্যেই। আরও জানা গেল তার ‘৮৬ বিশ্বজয়ের গল্প, লোকে যাকে 'ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ’ বলেই চিনে এসেছে। বরাবরই নানা আলটপকা মন্তব্যের কারণে পত্রিকার শিরোনাম হওয়া তিনি আত্মজীবনী লিখতে গিয়েও অকপট। কোচ কার্লোস বিলার্দোর সঙ্গে মারামারি, বার্সেলোনার ট্রফিঘরে শিরোপা ভাঙার কাহিনী, ‘৯৪ বিশ্বকাপের ডোপ কেলেঙ্কারিসহ জীবনের সব বিতর্কিত অধ্যায়ই এক অনায়াসভঙ্গিতে বলে গিয়েছেন মানুষটি। মাত্র আড়াই মাসের কর্মযজ্ঞে দাঁড় করানো হয়েছে বইটি। প্রকাশনার বিস্তীর্ণ জগৎ সম্পর্কে বইটির অনুবাদক সম্পূর্ণতঃই অজ্ঞ, তাই বইয়ের সম্পাদক, প্রকাশকসহ বই সংশ্লিষ্ট বাকিদের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়টা সহজেই অনুমানযোগ্য। বিশেষ করে সাজিদ রহমান ভাইয়ের নাম নেয়া না হলে দায় থেকেই যাবে। ‘এল দিয়েগো’র বঙ্গানুবাদ যদি পাঠক মনোরঞ্জনে তিলমাত্রও সমর্থ হয়, তবে এর পুরো কৃতিত্বটাই ভাগাভাগি করে দিতে হচ্ছে তিনিসহ বাদবাকি মানুষগুলোর মাঝে। তারা তাদের কাজে কতটুকু সফল হয়েছেন, জানাবার দায়িত্বটা পাঠক আপনাকেই নিতে হচ্ছে।