আমরা যারা মোটামুটি গোপনে ইসলামোফোবিয়া পুষে বেড়ানো নবজাগরণী আমজনতা, ব্রিটিশ আমলের পূর্বের প্রায় ৬০০ বছরের দক্ষিণ এশিয়ায় কী ধরণের পড়াশোনা হত, কেমন ছিল গ্রন্থাগার ব্যবস্থা , সে সম্বন্ধে তীব্র অজ্ঞ, কারন যে পাঠ্যক্রম আমাদের তৈরি হয়েছে, তাতে আমার এই অঞ্চলের নানান খুঁটিনাটি অনুপস্থিত। আমরা প্রাচ্যবাদের সুবাদে নালন্দা, তক্ষশীলার গ্রন্থাগার, পড়াশোনা ইত্যাদি চিনি, জানি কিন্তু সুলতানি মুঘল নবাবি আমলের গ্রন্থাগার বা পড়াশোনার কাঠামো সম্বন্ধে তীব্র অজ্ঞ। তার একটা বড় কারন ইওরোপিয় ইসলামোফোবিয়ার বাংলার অমুসলিম সমাজে বিস্তৃতি - যারা আমাদের বুঝিয়েছে ইসলাম মানেই যুদ্ধ, লুঠ আর বেলেল্লাপনার ইতিহাস। এক বিখ্যাত বাঙালি সেন্সিবল কবি মনে করতেন দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে সুলতানি বা মুঘল আমলের শাসকদের কোনও ভৌগোলিক জ্ঞান ছিল না, সুলতানি, মুঘল বা নবাবি আমলের অভিজাতরা পড়াশোনা করতেন না, শুধুই হারেম, যুদ্ধ আর বেলেল্লাপনার জীবন তাদের সঙ্গী ছিল। অথচ আকবরের সময় যে জেসুঈট পাদ্রিরা দক্ষিণ এশিয়ায় এসেছিলেন, আকবর তার ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার থেকে এমন কিছু খ্রিষ্টিয় বই উপহার দেন, যা তখন রোমের গ্রন্থাগারে ছিল না। তারা সেগুলো বয়ে নিয়ে শুন্যস্থান পূরণ করেন। মুঘল বা সুলতানি আমলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষণায় বিপুল গ্রন্থাগার ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। প্রসন্নন পার্থসারথী একটা ব্রিটিশ সমীক্ষা অনুসরণ করে বলছেন কোম্পানি আমলে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বিভিন্ন গ্রন্থাগার থেকে ৩ কোটি বই লুঠ হয়ে ইওরোপে চলেগেছে। আমরা দিন দিন নিজেদের দেশ, সমাজ, মানুষ সম্বন্ধে অজ্ঞ হয়েছি। উপনিবেশ বিরোধী চর্চা শৃংখলা হিসেবে বিমল কুমার দত্ত'র এই অসামান্য গ্রন্থটির একটা অংশ অনুবাদ করতে পেরেছি।আশাকরি দক্ষিণ এশিয়ার এই ধরণের ইতিহাস চর্চা আমাদের হীনমন্যতা এবং ইসলামোফোবিয়া কাটাতে সাহায্য করবে। বইটি এখন পাওয়া যাচ্ছে ঢাকা বইমেলায় গ্রন্থিক প্রকাশন-এ।