লেখক পরিচিতি জুবায়ের রশীদ। তরুণ আলেম, লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক৷ তারুণ্যের আঙিনায় স্বমহিমায় উজ্জ্বল ব্যক্তিসত্তা। কালির দ্যোতনায় ছড়াচ্ছেন অহিরৌশনি। ছাত্র কিতাব কলম এগুলোই তার নিত্যসঙ্গী। নিত্যকার পাঠের তালিকায় থাকে কুরআন হাদিস ফিকহসহ দেশি-বিদেশি হাজারো কিতাব কবিতা। জন্ম—নব্বই দশকের মাঝামাঝি ১৯৯৫ এর ১২ ডিসেম্বর, নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানাধীন একটি নদীমাতৃক গ্রামে। প্রাথমিক পড়াশোনার হাতেখড়ি মায়ের কাছে। পড়াশোনা আগাগোড়া ঐতিহ্যবাহী ট্রাডিশনাল দ্বীনি শিক্ষাকেন্দ্র কওমি মাদরাসায়। মক্তব ও কিতাব বিভাগের প্রাথমিক ক্লাসগুলো পড়েছেন নরসিংদীর মেরাজুল উলুম মাদরাসায়। অতঃপর ঢাকার জামিয়া রাহমানিয়া থেকে তাকমিল এবং আকবর কমপ্লেক্স থেকে ইফতা সম্পন্ন করেন। দেয়াল পত্রিকায় লেখালেখির হাতেখড়ি। অতঃপর তারুণ্যের পুষ্পলগ্নে আবেগ ও ভালোবাসায় লিখেছেন অসংখ্য পত্রিকা-ম্যাগাজিনে, সাহিত্য-সাময়িকীতে। প্রয়োজনের তাগিদে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের ইসলাম বিভাগে দু-হাতে লিখে যাচ্ছেন সর্বসাধারণের বোধগম্য করে। লেখালেখি জীবনের অন্যতম স্বপ্ন ও মিশন। মৌলিক গ্রন্থ রচনার পাশাপাশি অনুবাদ করছেন সালফে-সালেহিনের মূল্যবান গ্রন্থ। করছেন সম্পাদনাও। মৌলিক, অনুবাদ ও সম্পাদনা সবমিলিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ২০টি। এছাড়া প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে আরও বেশকিছু গ্রন্থ। ইতিহাসের সোনালি আস্তিন, মৃত্যুঞ্জয়ী সাহাবি, হ্যাপি ম্যারিড লাইফ, উম্মুল মুমিনিন সিরিজ, সাহাবি সিরিজ, আল্লাহ আপনাকে দেখছেন, সিয়ারুস সাহাবা, একগুচ্ছ নাসিহাহ, তাওহিদের পাঠশালা তন্মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
#পাঠ্যানুভূতি: এমন হলে কেমন হতো! যদি রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে যেসকল সাহাবায়ে কেরাম মনপ্রাণ উজাড় করে ভালোবেসেছেন, ইসলামের জন্য নিজেদের জানমাল দুটোই খরচ করেছেন, আল্লাহর ভালোবাসা পেতে ছিলেন সদা অগ্রগামী তাদের মধ্যে থেকে বিশেষ কিছু সাহাবীর কীর্তিগাঁথা ইতিহাস জানতে পারবো এক মলাটের ভেতরে- তাহলে নিশ্চয়ই আপনি ভীষণ রকম খুশি অনুভব করবেন। আর হ্যাঁ, এমনটা আমি নিজে অনুভব করছি।
স্কুল জীবনের ইসলাম শিক্ষা বইতে গুটিকয়েক সাহাবিদের ব্যাপারে অল্পস্বল্প জানার সুযোগ হয়। এরপর কেটে গেছে বহুসময়। মাঝে কিছু সময় রাহনুমা প্রকাশনীর ' সাহাবায়ে কেরামের ঈমানদীপ্ত জীবন ১ম ও ২য় খন্ড' বইতে সাহাবিদের ব্যাপারে আরো তথ্য জানতে পারি। ঐ বই দুই খন্ডের বর্ণনা ছিলো বাকি বইগুলোর মতোই কিন্তু এ বইতে সাহাবায়ে কেরামের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে গল্পের ছলে। যারা গড়পড়তা সাহাবায়ে কেরামের ইতিহাস পড়তে অনাগ্রহ দেখান তাদের জন্য এ বইটা বেশ সুখকর হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বইটি পড়ার সময় পাঠক ইতিহাসের সেই সোনালি সময়ে ফিরে যাবেন যখন সাহাবায়ে কেরাম পৃথিবীর বুকে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছেন। এই ত্যাগের ইতিহাস জানার মাধ্যমে তৈরী হবে আগামী দিনের সালাহুদ্দীন আইয়ূবী, মুহাম্মদ বিন কাসিম, তারিক বিন জিহাদের মতো অকুতোভয় বীরসেনা।
#বইটির_প্রয়োজনীয়তা: এ বইটির বদৌলতে মহান সাহাবী সালমান ফারসী রা. এর ইসলাম গ্রহণের পেছনে কি পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করেছেন সে কাহিনী জানার সুযোগ ঘটবে। ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ হওয়া তখন নিতান্ত সহজ হয়ে যাবে। সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা. এর সততার ঘটনা আপনাকে মুগ্ধ করবে। ওনার মতো সৎ হওয়ার অনুপ্রেরণা জোগাতে সাহায্য করবে। আমর ইবনে জামুহ রা. বৃদ্ধ বয়সে এসেও জিহাদে শরীক হওয়ার জন্য যে প্রবল আগ্রহ দেখিয়েছেন সেটা নিঃসন্দেহে হৃদয়ে ভূমিকম্প সৃষ্টি করবে। নবীপ্রেমে পাগলপারা খুবায়েব রা. এর জীবন কুরবানির ঘটনা জানার মাধ্যমে আপনার ঈমানি চেতনা গরম পানির মতো টগবগ করে ফুটতে থাকবে। আপনিও খুব করে চাইবেন ওনার মতো আশেকে রাসূল হতে। সম্পদ নিজের কাছে কুক্ষিত না করে গরীবদেরকে বিলিয়ে দেয়ার মাধ্যমে দুনিয়ার পাশাপাশি আখিরাতেও কীভাবে সফল হতে হবে সেটা জানতে পারবেন সাহাবী আবুজর গিফারী রা. এর জীবনকথা পড়ার মাধ্যমে। এ বইতে আরো অনেক সাহাবিদের ঘটনা এসেছে। এখানে অল্প কিছু বলে শেষ করলাম।
#লেখকের_লেখার_মান: এ প্রথম লেখকের কোনো মৌলিক বই পড়ার সুযোগ হলো। প্রথমে ওনার কয়েকটা অনুবাদ বই পড়ছিলাম। অনুবাদ বইগুলোতে ভূমিকা অংশটি পড়ে খুব মুগ্ধ হতাম। সেই থেকে একদিন ভাইকে মৌলিক বই লিখতে আহবান করি। আজ অনেকদিন পর আমার সে আশা পূরণ হয়েছে। কতটা খুশি হয়েছি সে কথা বলে বুঝাতে পারবো না। বইতে ব্যবহৃত লেখকের উপমা, বর্ণনাশৈলী, শব্দ নির্বাচন দেখে ভীষণরকম মুগ্ধ হয়েছি। উপমাগুলোর ব্যবহার ছিলো 'হাজার বছর ধরে' উপন্যাসের কালজয়ী লেখক জহির রায়হানের মতো। বর্ণনাশৈলীও ওনার সাথে কিছুটা মিলছে। বইয়ের বিষয়বস্তু বুঝতে কঠিন হবে এমন কোনো শব্দের উপস্থিতি ছিলোনা বললেই চলে। বর্ণনাশৈলী দেখে যেকেউ বলতে বাধ্য হবে ভালো লেখক হওয়ার পথেই হেঁটে চলেছেন।
#বইয়ের_ছাপা_বাঁধাই_প্রচ্ছদ_কাগজের_মান: এ বইটির ছাপা ও বাঁধাই বেশ ভালো হয়েছে। প্রচ্ছদ যিনি করেছেন ওনার কাজের দক্ষতার প্রশংসা করতেই হবে। যেভাবে উনি বইয়ের বিষয়বস্তু নীরিক্ষে প্রচ্ছদ ও বইয়ের নামের ফন্ট নির্বাচন করেছেন সেটা সত্যি অনন্য হয়েছে। বইয়ের কাগজের মানও ভালো। রাত-দিনের উভয় সময়ের আলোতে পড়তে চোখে কোনোপ্রকার সমস্যা হবে নাI