সৈয়দ হোসেন নসর বলছেন, ঐতিহ্যগত ইসলামী টেরিটরিতে সর্বপ্রধান এবং প্রথম দার্শনিক হলেন ইরান শাহরী, যিনি একজন পারসিক। কিন্তু এখনও এই দার্শনিকের লিখিত বইয়ের আমরা কোন হদিস পাইনি। অপরদিকে উমাইয়া খলিফাদের সাথে দন্দে জড়িয়ে পড়া হাসান আল বাসরি’র ‘বুদ্ধির স্বাধীনতা’ বিষয়ক রিসালা পড়লে তাকেই প্রথম দার্শনিক মনে না করার কোন কারণ দেখিনা। এ-বিষয়ক অনেক তত্ত্ব-তালাশ করেছেন চবি’র ড. বদিউর রহমান। যাহোক হোসেন নসর বলেন, ‘এই ইরান শাহরীই মূলত পূর্বাঞ্চলে দর্শন শাস্ত্র নিয়ে আসেন। আল ফারাবি হতে সোহরাওয়ার্দী পর্যন্ত পরবর্তী অনেকে সেটাকে ইসলামী দর্শনের আদি উপৎত্তিস্থল বলেছেন।’ কিন্তু হাসান নসর এই ইতিহাসকে পুরোপুরি মানতেও চাননি বরং তিনি ‘পেরিপ্যাটেটিক’ বা ‘মাশশাই’ দর্শনকেই ইসলামি দর্শনের আদি স্কুল বলতে চেয়েছেন যার শুরু ছিল আবু-ইয়াকুব আল কিন্দীর হাত ধরে! কিন্দীদের হাত ধরে আসেন ফারাবি, যাকে নিয়ে পাশ্চাত্যে সম্ভবত বেশ ভালোই গবেষনা হয়েছে। ফারাবিই মূলত ইসলামী রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি রাজনৈতিক দর্শনে প্লেটোকেই অনুসরন করতেন বলে মনেহয়। এরপর যিনি বহুল পঠিত এবং আলোচিত তিনি আল শেইখ আল-রাইস (জ্ঞানীজনদের মধ্যে প্রধান নেতা), পাশ্চাত্যে আভিসিনা এবং আমাদের মাঝে ইবনে সিনা হিসেবে পরিচিত। ইবনে সিনার মতে আত্না মূলত দেহের কাঠামো দ্বারা আবদ্ধ। কিন্তু তিনি সক্রেটিসের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া সত্ত্বেও ‘ভালো আত্ত্বা’ ‘মন্দ আত্ত্বা’ এভাবে আত্ত্বাকে ভাবেননি। বরং তিনি বলতে চেয়েছেন দেহ থেকে আত্ত্বার মুক্তির পথ ‘জ্ঞান’ যার সাথে প্লেটোর ‘ফ্রিডাস’ গ্রন্থের খানিক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সম্ভবত তিনি ‘স্রষ্টা-সৃষ্টি’ অংশে দ্বৈত ভাবেই বিশ্বাস করতেন কিন্তু জগতের সৃষ্টিতে ‘অনন্ত বিকিরন’ প্রক্রিয়ার রেজাল্টকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। আমাদের দেশে ইবনে সিনাকে নিয়ে খুব বেশী আলোচনা হয় নাই কিন্তু তাকে ব্যবহার করে বানিজ্যের কাজ চলছে পুরোদমে। আমি তাকে নিয়ে স্টাডি করতে চাইলে বড়জোর দু’তিনটি বই পাবো। কিন্তু হাল আমলের বিশ্ববিদ্যালয় পডুয়া তরুনেরা তাকে নিয়ে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন যেটা দারুন আশার কথা। যাহোক আমাদের দেশে তাকে নিয়ে আলোচনা না হলেও তিনি ‘আস্তিক’ নাকি ‘নাস্তিক’ এ বিষয়ক বিস্তর খোশগল্প চায়ের দোকানে বসে বেশ আরামদায়ক টপিক হয়ে ওঠে মাঝেমাঝে। তো আসুন ঐ ‘আলোচকদের’ ইবনে সিনা কি বলেছেন, দেখি- ‘আমাকে কাফের বলা হালকা ও সহজ নয় ততো ধর্মে আস্তা কোথা দৃঢ আমার মতো। ব্যক্তি আমি বিশ্বে অপরূপ, আমি যদি ধর্মহীন, তাহলে কোথাও নেই একটিও মুসলিম মোমিন।’