রক্তক্ষয়ী একাত্তরে স্নিগ্ধশ্যামল বাংলাদেশে কত ঘটনাই না ঘটেছিল। কিন্তু আমাদের পরমপ্রিয় স্বাধীনতার চার যুগে আমাদের পেছন ফিরে তাকালে এখন অনেক কিছুই আর চোখে পড়ে না। কত ছবি মুছে গেছে। কত গান হারিযে গেছে বিস্মৃতির অন্ধকারে। কে আজ তার হিসেব রাখে। কালচক্রের নির্লিপ্ত ঘূর্ণনে বহু গৌণ বিষয় পরিণত হয়েছে ইতিহাসের অপরিহার্য উপাদানে। আবার অনেক মুখ্য প্রসঙ্গ চাপা পড়ে গেছে বিস্ফোরণের ভস্মস্তুপের নিচে। ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ উঠেছে। অথচ প্রকৃত ইতিহাসও রচিত হয়নি। সুদীর্ঘ প্রায় চারযুগেও থামছে না তর্কের কোলাহল। ঊপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র সখেদে বলেছিলেন- ‘সাহেবদের পক্ষি শিকারের ইতিহাস আছে- বাঙালি তোমার ইতিহাস নেই’। কবে চলে গেছে বঙ্কিমের যুগ। বাঙালি দীর্ঘদিন তার আত্মপরিচয় খুঁজে পায়নি। এমনকি এক সমুদ্র রক্ত মন্থনের পর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটলেও তার অত্মজিজ্ঞাসার অবসান ঘটেনি। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে বাংলার স্বধীনতা সম্ভব হয়েছে। বাঙালির ইতিহাসও লেখা হচ্ছে। ইতিহাস কেবল বৃহৎ ঘটনার কালানুক্রমিক বর্ণনা নয়। স্বাধীনতার প্রসূতিঘর মেহেরপুরে জন্ম লেখক তোজাম্মেল আযমের। সাংবাদিকতা পেশায় তিনি জেলার প্রান্তিক জনপদ ঘুরে ফেরেন। অগণিত মানুষের সাথে মিশে মমতার সাথে বাংলাদেশের প্রথম সরকারের অসংখ্য ক্ষুদ্র ও আপাততুচ্ছ বিষয় মূল উপকরণ হিসেবে মুজিবনগর : যুদ্ধ জয়ের উপাখ্যানে তুলে এনেছেন গ্রন্থে। লেখক তোজাম্মেল আযমের সার্থকতা এখানেই।