আমাদের জাতীয় ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম অধ্যায় হলো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্মলাভ করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমরা জানি, মুক্তিযুদ্ধে এক কোটিরও অধিক বাঙালি ভারত ও বার্মার আরাকান প্রদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হলেও কক্সবাজারের পার্শ্ববর্তী আরাকানে লক্ষাধিক বাঙালি শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন এবং বার্মা সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ইতিহাস নিয়ে তেমন গবেষণা হয়নি। মুক্তি সংগ্রামের পঞ্চাশ বছর পর সেই ইতিহাস নিয়ে লেখা ও যুদ্ধকালীন দালিলিক প্রমাণ পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। তাছাড়া বস্তুনিষ্ঠ বিবরণ হিসেবে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিষয়াবলীর বিশুদ্ধতা প্রশ্নসাপেক্ষ। এই পরিপ্রেক্ষিতে ইতিহাসের উপাদান সংরক্ষণের জন্য মৌখিক তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ইতিহাস অনুসন্ধানে গবেষক কালাম আজাদও ঙৎধষ ঐরংঃড়ৎু বা কথ্য ইতিহাস সংগ্রহ পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। ইতিহাস রচনার উৎস হিসেবে সাক্ষাৎকার বা স্মৃতিকথার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অন্যান্য উপাদানের অভাবে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বইটিতে আরাকানে আশ্রয় নেওয়া বাঙালি শরণার্থীদের কর্মকাণ্ড, জীবন যাপন এবং শরণার্থী সম্পর্কে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিমাতাসূলভ আচরণ ইত্যাদির সামগ্রিক চিত্র তথা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী দেশের অবস্থান ও ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস হিসেবে ভবিষ্যৎ গবেষক ও লেখকদের বিশদ তথ্য-উপকরণ জোগানোর পাশাপাশি এ বই পাঠককে যুদ্ধকালীন বাস্তবতা বুঝতেও সাহায্য করবে। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আশা করছি পাঠক এ বই সাদরে গ্রহণ করবেন।