গবেষণাকর্ম গুরুমুখী বিদ্যা। গুরু হাতেকলমে শেখান। সবসময় গুরু প্রত্যক্ষ কেউ নাও থাকতে পারেন, সেক্ষেত্রে যাঁর লেখা পড়ে কলাকৌশল শেখেন তাঁকে পরোক্ষ গুরু হিসেবে ধরা যেতে পারে। এ লেখা শেখার বিদ্যা জীবনব্যাপী চলে, চলতে থাকে। আজীবন সে পথই বেছে নিয়েছেন এ গ্রন্থের লেখকগণ । “মাহাতো জনগোষ্ঠীর সমাজ ও সংস্কৃতি” গ্রন্থের লেখক তিনজন। ড. খ.ম. রেজাউল করিম, ড. সুধাংশু শেখর মাহাতো ও উজ্জ্বল মাহাতো। দুজন পিএইচ.ডি ডিগ্রিধারী। তাঁরা গুরুর কাছ থেকে শিখেছেন গবেষণা কীভাবে করতে হয়, কীভাবে তা উপস্থাপন করতে হয়, কী তার আঙ্গিক সৌষ্ঠব হয় ইত্যাদি। এদের একজন ড. খ.ম. রেজাউল করিম, যিনি আমার পিএইচ.ডি ডিগ্রিকালের সতীর্থ। তাঁকে ২৩ বছর ধরে চিনি। তিনি পরিশ্রমী ও গবেষণায় লেগে থাকেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ ও প্রবন্ধও প্রচুর। এ চেষ্টাকে আমি সম্মান করি। অন্য দুজনের একজন তো গবেষণা হাতেকলমে গুরুর নিকট শিখেছেনই। তাছাড়া এ দুজনের বিশেষ কৃতিত্ব হলো তাঁরা আলোচ্য শিরোনামের গ্রন্থের সমাজেরই সম্মানিত সদস্য। সুতরাং তাঁরা শিখেছেন পরিবার, সমাজ ও চারপাশের প্রকৃতি থেকে। তাঁদের যে সমাজ, যে বস্তুগত ও মানস সংস্কৃতি, যে লৌকিক আচার-আচরণ-সংস্কার, যে বিশ্বাস-অবিশ্বাস তা তো তাঁরা ওই সমাজ থেকে দেখে দেখে, উপলব্ধি করেই বড়ো হয়েছেন। ওই সমাজ ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ তাঁদের সবচেয়ে বড়ো গুরু হিসেবে শিখিয়েছে। তারই বিশ্বস্ত বর্ণনা এ গ্রন্থের পরতে পরতে। তাঁরা তিনজন বহু বিষয়ে নিশ্চয়ই আলোচনা-পর্যালোচনা করেই এ গ্রন্থ লিখেছেন । তিনিই বড়ো লেখক হতে পারেন যিনি নিজের লেখার প্রতি সবচেয়ে ভালো, সবচেয়ে নির্মম ও কঠোর, সবচেয়ে বড়ো সমালোচক হতে পারেন। এ পাণ্ডুলিপি আমাকে ভূমিকা লিখে দেয়ার জন্য পাঠানো হলে আমি প্রথম পাঠের পর ড. রেজাউল করিমকে উপর্যুক্ত পরামর্শ দিই, মানে নির্মম হাতে কাটতে-ছাঁটতে পরামর্শ দিই। তারপর তিনি এ পাণ্ডুলিপিকে যথাসাধ্য পরিশিলিত করে পাঠান। আমি নিজে সীমাবদ্ধ জ্ঞান দিয়ে আরও খানিকটা সমৃদ্ধ করার পরামর্শ দিই। সব মিলিয়ে গ্রন্থটি এখন তথ্যবহুল একটি গ্রন্থ হিসেবে প্রকাশিত হলো বলে আমার মনে হয় ।