১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একনাগাড়ে দীর্ঘদিন অতিবর্ষণের ফলে এক মহাপ্লাবনের সৃষ্টি হয়। বিশাল জলরাশি তিস্তার ধারণক্ষমতা ছাপিয়ে তৎকালীন জলপাইগুড়ি এবং রংপুর অঞ্চলে এক মহাতাগুব ঘটায়। তিস্তা পূর্বতন খাত পরিত্যাগ করে নতুন পথ খুঁজে নেয় (বর্তমান পথটি) এবং বিপুল পরিমাণ জলরাশি ব্রহ্মপুত্রে ঢেলে দেয়। এরপর প্রাকৃতিক নানা প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যমুনা নামে একটি নতুন প্রবাহ তৎকালীন বৃহত্তর রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিহ এবং ঢাকা জেলার শত শত মৌজা ভেঙে নিজ গর্ভে ধারণ করে এবং শেষ পর্যন্ত পদ্মার সঙ্গে একত্রিত হয়। যমুনা নদী সৃষ্টি হতে সময় নিয়েছে প্রায় ৩০ বছর। বাংলাদেশের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় এই ঘটনায় উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলের নদীব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে গেছে। রদবদল হয়েছে ভূদৃশ্যেরও। প্রথমত, তিস্তার গতিপথ পালটানোর ফলে বুড়িতিস্তা, মরাতিস্তা, ঘাঘট এবং মানস এই নদ-নদীগুলো নির্জীব এবং স্রোতহীন অবস্থায় পৌঁছে গেছে। যমুনার আবির্ভাবে জনায়ী বা যমুনা, সলঙ্গী, দাওকোবা এই নদীগুলো চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মানস আংশিক বিলুপ্ত হয়েছে। আত্রাই, করতোয়া, ইছামতী নদীগুলোর মোহনা যমুনা সৃষ্টির কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। নবসৃষ্ট যমুনার আবির্ভাবে কয়েকটি নতুন নদী বাংলার মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে। হুরাসাগর, ফুলজোড়, গড়াই, জলঙ্গী, কীর্তিনাশা, নয়াভাঙনী নদ-নদীগুলো বাংলার ভূদৃশ্যে নবতর সংযোজন। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দের মহাপ্লাবন বাংলাদেশে চতুর্থবারের মতো ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ পরিবর্তনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। ব্রহ্মপুত্রের প্রাচীনতম খাত রয়েছে নরসিংদী জেলার উয়ারী-বটেশ্বর নামক প্রাচীন বন্দরনগরীর পাশ দিয়ে। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ বছর থেকে খ্রিস্টপরবর্তী কয়েকশ বছর বর্তমান সময়ের বেলাবো, রায়পুরা, শিবপুর উপজেলার মধ্যদিয়ে ছিল প্রাচীন ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহপথ। ভূপ্রকৃতিগত কারণে এই পথটি পরিত্যক্ত হলে আড়ালিয়া-লাখপুর-পঞ্চমীঘাট-লাঙ্গনবন্দ-কলাগাছিয়া পথটি চালু হয়। এরপর সুলতানি আমলের শেষে ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে বাহাদুরাবাদ-ময়মনসিংহ-টোক-বৈরববাজার পথটি খুলে যায়। বর্তমান সময়ের যমুনা ব্রহ্মপুত্রের প্রতিনিধিত্ব করছে।
মাহবুব সিদ্দিকী জন্ম গঙ্গা পাড়ের রাজশাহী শহরে । পিতার চাকরি সূত্রে বাল্যকাল ও কিশোর সময় কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় । পেশাগত জীবনে পুলিশ বিভাগে চাকরির সুবাদে দীর্ঘ ৩৬ বছরের অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছে। বাংলাদেশকে দেখেছেন খুব নিকট থেকে। বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য সর্বপরি এখানকার মানুষদের বৈচিত্র্যপূর্ণ সামাজিক জীবন নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন । বাংলাদেশের নদ-নদী এবং স্থানীয় ইতিহাস বিষয়ক একাধিক মৌলিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত গ্রন্থ সমূহ— 'আম', 'শহর রাজশাহীর আদিপর্ব', 'বাংলাদেশের বিলুপ্ত দীঘি- পুষ্করিণী-জলাশয়', 'নারদ নদ', 'বড়াল নদের ইতিকথা', 'ফিরিয়ে দাও সেই প্রবাহ', 'গঙ্গা-পদ্মা- পদ্মাবতী', 'আমাদের নদ-নদী', 'ব্রহ্মপুত্র নদ', “কোন আমটি কখন খাবেন', 'রাজশাহীতে পর্যটন সম্ভাবনা', 'বৃহত্তর সিলেটের সংক্ষিপ্ত বিবরণ- সিলেট মহানগরীর বিলুপ্ত জলাশয়' ইত্যাদি । ভালোলাগার বিষয় : বাংলাদেশের প্রকৃতি এবং এদেশের মানুষ ।