"ভারতের বর্ণব্যবস্থা" বইটির 'অনুবাদকের কথা' অংশ থেকে নেয়াঃ আনুমানিক তিন হাজার বছর বা তারও কিছু আগে দক্ষিণ এশিয়ার সমাজ ব্যবস্থায় বর্ণপ্রথার উদ্ভব ঘটে। কায়িক শ্রম ও বৃত্তির প্রতি অবজ্ঞার মনোভাব এবং পরবর্তীতে শ্রমজীবী মানুষের সাথে অভিজাতদের সাংস্কৃতিক ব্যবধান বর্ণপ্রথার কারণ হয়ে থাকতে পারে। সমাজের বৃহত্তর অংশ শ্রমজীবী, তাদের সবাইকে একটি নিচু বর্ণে ফেলে দিলে, সবাই মিলে বিদ্রোহ করতে পারে; সে চিন্তা থেকে বর্ণব্যবস্থাকে সাজানো হলো স্তরীভূত শিলার মতো করে। সবার উপরে ব্রাহ্মণ, তার নীচে ক্ষত্রিয়, তার নীচে বৈশ্য, তার নীচে শূদ্র। আমরা এ চতুর্বর্ণ ব্যবস্থার কথা সাধারণত জানি। তবে বাস্তবত এ চতুর্বর্ণের বাইরে বিরাট অংশের মানুষকে রাখা হয়; যাদের বলা হতো ব্রাত্য (ব্রতহীন) বা অন্ত্যজ (অন্তে বাসী) বা পঞ্চমবর্ণ। এদের প্রতি অবজ্ঞার মনোভাব ঘৃণায় পর্যবসিত হয় এবং সমাজে তাদের অস্পৃশ্য করে রাখা হয়। অস্পৃশ্যতা বর্ণবাদের নিকৃষ্টতম রূপ। আর বর্ণগুলো ভেঙে ভেঙে গঠিত হয়েছে শত শত জাতপাত। পৃথিবীর সব অঞ্চলেই কোনো না কোনো আকারে শ্রেণিবিভাজন দেখা দিয়েছিলো। তবে সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শ্রেণিরও রূপান্তর হতে থাকে। ইউরোপে প্রাচীন কালের শ্রেণিবিভাজন সামন্ততান্ত্রিক সমাজে এসে থাকেনি। আবার সামন্ততান্ত্রিক সমাজের শ্রেণিবিভাজন পুঁজিবাদী সমাজে এসে রূপান্তরিত হতে বাধ্য হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া বিশেষত হিন্দু সমাজ ব্যবস্থা তার ব্যাতিক্রম। শ্রেণিতত্ত্বকে শাস্ত্রের প্রক্ষিপ্ত অংশের সাথে জুড়ে দিয়ে এমন ভাবে প্রচার চালানো হয়েছে যেনো বর্ণপ্রথা ধর্মের অনুষঙ্গ। ফলে প্রাচীন ভারতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বর্ণপ্রথা সব সমাজ ব্যবস্থাকে অতিক্রম করে আজো টিকে আছ। আদিম যুগের এরকম অবশেষ হিন্দুদের মতো আর কোনো সমাজ বহন করে না।