মুসলিম দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষ রাষ্ট্রযন্ত্র সম্পর্কে হেঁয়ালিপনার মধ্যে রয়েছে। যৎসামান্য জানাশোনা থাকলেও তা যাপিত জীবনে খুব দরকারি বলে বিবেচিত হচ্ছে না। একুশ শতকের এই বস্তুবাদী দুনিয়ায় খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাটাই যেন একমাত্র দায়! অথচ অজ্ঞাতে রাষ্ট্র তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে, কিন্তু রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে প্রাপ্য অধিকারকে নিজের করে নেওয়ার কোনো তাড়না তার ভেতর নেই! উদাসীনতা নাগরিকদের একটা যন্ত্রে পরিণত করছে; যার আল্টিমেট পরিণতি- চালাক, চতুর, বুঝদার এক কায়েমি শক্তির দাসত্ব কবুল করা। মুসলিম মানসে ইসলামি রাষ্ট্রধারণার চরম অনুপস্থিতি বিরাজমান। মুসলমানরা ঠিক জানে না, আদতে কী ধরনের রাষ্ট্র তারা নির্মাণ করতে চায়। রাষ্ট্র, রাষ্ট্রতত্ত্ব বলতে মুসলমানরা ঠিক কী বোঝে, কী বোঝাতে চায় বিশ্ববাসীকে? যারা জাহেলি রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তে ইসলামি জীবনবোধের আলোকে নববি রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্নে বিভোর এবং সে প্রচেষ্টায় নিজের জীবন- যৌবনের সেরাটা ঢেলে দিচ্ছে, ঠিক তারাও রাষ্ট্রচিন্তাকে আন্তরিকভাবে বোঝার কোনো তাগিদ অনুভব করছে না। এই সংকটাবস্থায় ‘ইসলামি রাজনৈতিক তত্ত্বে রাষ্ট্রধারণা’ গ্রন্থে আধুনিক মুসলিম স্কলারদের রাষ্ট্রচিন্তাকে ঠিক তাঁদের বয়ানে তুলে ধরেছে। গ্রন্থটিতে মুসলিম চিন্তকদের জবানে উপস্থাপিত হয়েছে মুসলমাদের রাষ্ট্র, রাষ্ট্রভাবনা ও রাষ্ট্র-কাঠামো।
বাংলাদেশী যুবক হাফিজুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার জন্য ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাকে পাড়ি জমাতে হয় তুরস্কে। তুরস্কের আঙ্কারা অঞ্চলের গাজি ইউনিভার্সিটির পিএইচডি প্রোগ্রামে তিনি অংশগ্রহণ করেন। ‘আধুনিক যুগে রাষ্ট্র ধারণা এবং ইসলামি রাজনীতি’ বিষয় নিয়ে তাকে গবেষণাপত্রটি তৈরি করতে হয়েছিলো। সুতরাং হাফিজুর রহমানের আগ্রহের মূলবিন্দুতে যে বিশ্বরাজনীতি একটি বিশাল জায়গা দখল করে আছে তা সহজেই বোঝা যায়। তাই তার প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থটিও যে বিশ্বরাজনীতির কোনো তুখড় দিকনির্ধারণকারীকে নিয়ে হবে তা বোধগম্য। হাফিজুর রহমান (পিএইচডি) এর বই সমূহ মূলত তার তুরস্কে অবস্থানকালীন আহরিত জ্ঞান দ্বারা অণুপ্রাণিত। বিশেষত, তার প্রথম লেখাটিকে প্রভাবিত করেছিলো একটি সম্মেলন। তুরস্কে পৌঁছানোর এক মাসের মাঝে তুরস্কের নেতা এরদয়ানের একটি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি, যেখানে শত শত তরুণের সাথে হাফিজ নিজেও এরদোয়ানের বলশালী বক্তব্য শুনে মুগ্ধ এবং পরবর্তীতে প্রভাবিত হয়েছিলেন। উল্লেখ্য, হাফিজুর রহমান যে সময়ে তুরস্কে অবস্থান করছিলেন তখন তুরস্ক এরদোয়ানের নেতৃত্বে দিন দিন উন্নতির চূড়ায় পৌঁছাচ্ছিলো। তাই ২০১৬ সালের মে মাস থেকে টানা ২০ মাস হাফিজুর রহমান এরদোয়ানকে নিয়ে বিশ্লেষণ করে যান। অতঃপর ২০১৮ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয় বাংলা ভাষায় লেখা এরদোয়ানের জীবনী। হাফিজুর রহমান (পিএইচডি) এর বই সমগ্র এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো- ‘এরদোয়ান: দ্য চেঞ্জমেকার’ ও ‘আমার দেখা তুরস্ক: বিশ্বব্যবস্থার নতুন শক্তি তুর্কি জাতির ভেতর-বাহির’।