সিকিম হিমালয়ের ৭,২০০ মিটার উচ্চতার চিতামু হৃদ থেকে সৃষ্ট নদী তিস্তা। যা বাংলাদেশ-ভারত আন্তঃসীমান্ত নদী হিসেবে পরিচিত। তিস্তাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল উত্তর জনপদ। রংপুর বিভাগের বিস্তীর্ণ এলাকার মাটি ও মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম জল প্রবাহ তিস্তা নদী অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত ভরা যৌবনা হয়ে বিভিন্ন নদী প্রবাহের মাধ্যমে গঙ্গার সাথে যুক্ত ছিল। ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে বন্যার পর তিস্তা গতিপথ পাল্টে লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে চিলমারী নদী বন্দরের দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদে যুক্ত হয়। ভরা নদী তিস্তার গতি-প্রবাহকে বাধাগ্রস্থ করে ভারতের পার্বত্য অঙ্গরাজ্য সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে অসংখ্য জলবিদ্যুৎকেন্দ্র। ফলে যৌবনা নদী তিস্তা আজ মৃতপ্রায় সরু ক্যানেল। পরিণত হয়েছে ধুধু বালুচরে। ভারতের পানিবণ্টন গড়িমসির কারণে প্রবাহমান তিস্তা পাড়ের মানুষের জীবন-যাত্রা এবং জীবিকার হাহাকারেরও শেষ নেই। তিস্তা নদী এবং তিস্তা পাড়ের মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ে এটাই প্রথম তথ্যমূলক গ্রন্থ। এর আগে শুধুমাত্র তিস্তা কেন্দ্রীক গ্রন্থ আমার নজরে পড়েনি। লেখক তাঁর কাজের প্রতি চ‚ড়ান্ত নিষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন। সরেজমিনে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে তিনি ভারতের সিকিম, নিরাপত্তা বেষ্টনিঘেরা গজলডোবা ব্যারেজ ও বাংলাদেশ অংশে তিস্তার চর, চরের মানুষের জীবন-জীবিকা সবখানেই চষে বেড়িয়েছেন। কাছ থেকে দেখেছেন তিস্তাকে, তিস্তা পাড়ের মানুষের দুঃখ, দুর্দশাকে। গ্রন্থটি কোনো টেবিল গ্রন্থ নয়। গ্রন্থকারের যেমন সময় ও পরিশ্রম গেছে, তেমনি তাকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঝুঁকিও নিয়েছেন তিনি। তিস্তা নদী ও তিস্তা পাড়ের জীবনযাত্রাকে জানতে গ্রন্থটি অমূল্য। লেখক পূর্ব প্রকাশিত তিস্তা-সংক্রান্ত অনেক তথ্য-উপাত্ত অকৃপণ হাতে গ্রহণ করে গ্রন্থকে সমৃদ্ধ করেছেন। প্রকাশক
কবি ও কথাসাহিত্যিক রানা মাসুদের জন্ম ১৯৭০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রংপুরে। লেখালেখি করছেন তারুণ্য থেকেই। সাংবাদিকতা করেছেন। রংপুর থেকে প্রকাশিত সর্বাধিক জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক যুগের আলো’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন একসময়। ফটোগ্রাফিও ছিল তার শখ। শিশুকিশোরদের সঙ্গে তার দারুণ সখ্য। জীবিকার তাগিদে একসময় পত্রিকা ছেড়ে হাল ধরেন পৈতৃক ব্যবসার। ব্যবসার ব্যস্ততায় হয়ে পড়েন নিভৃতচারী। তবে চর্চা থেমে থাকেনি। নীরবে চলেছে লেখালেখি। প্রায় দুই যুগ পর নতুন লেখা নিয়ে সাহিত্যাঙ্গনে তাঁর ফিরে আসা। ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর কিশোর রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাস ‘কক্সবাজারের মাছলি বাবা’, দার্জিলিংয়ের ডোবারম্যান, কাব্যগ্রন্থ ‘জীবনের চার লাইন’। বড়দের জন্য লেখা উপন্যাস দূর কোন দূর ঠিকানায়, গল্পগ্রন্থ এভাবেই আছি ও অন্যান্য গল্প এবং যুবকের একটা পাপ আছে।