ফ্ল্যাপের লেখাঃ ‘বুয়েট স্মৃতিকথা' কথাশিল্পী ও কবি প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামছুজ্জামান এর আত্মজীবনীর অংশ। তিনি এপ্রিল-১৯৭৯ থেকে নভেম্বর-১৯৮৩ পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) অধ্যয়ন এবং সোহরাওয়ার্দী হলে অবস্থান করেছিলেন। তার সেই সময়ের লিখিত রোজনামচা (১৯৮১-৮৩), সংরক্ষিত বন্ধু-স্বজনের চিঠিপত্র ও ছবির ভিত্তিতে তেতাল্লিশ বছর আগের ঘটনা-কাহিনী আত্মজৈবনিক কথনে স্মৃতিকথায় ধরা হয়েছে। নবীন রাষ্ট্রের সেই সময়ের সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতির অস্থির অবস্থাজাত বাস্তব পরিবেশ-পরিস্থিতি লেখক নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা এবং গভীরতায় দেখেছিলেন। নিম্নবিত্তের সাধারণ স্তরে লেখকের কষ্টকর বেড়ে ওঠার এক সংগ্রামলব্ধ অভিঘাতে দেখা জীবনের সুখ-দুঃখের বাস্তব গল্প স্মৃতিকথায় শৈল্পিকভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এখানে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের ঝঞ্ঝাটপূর্ণ আশির দশক বুঝাতে লেখক অকপটে নিজের অসম্পন্ন পরিবার, স্বজনদের স্বার্থপরতা, স্বজনহীন ঢাকায় বেড়ে ওঠা, টিউশনি পেশায় টানাপড়েন, দেশের দেউলিয়া রাজনীতি, যাপিত জীবনের অনিশ্চয়তা, যৌবনের রঙিন ঘোর তুলে ধরেছেন। এক নিঃসঙ্গ ও কপর্দকহীন অদম্য মেধাবী ১৭ বছর তরুণের প্রকৌশল বিদ্যা পড়তে স্বজনহীন ঢাকায় আগমন এবং নিয়ত সংগ্রাম মুখর জীবনের মাঝ দিয়ে শেরপা হয়ে ওঠার গল্প বলা হয়েছে 'বুয়েট স্মৃতিকথা'য়। এই স্মৃতিকথায় বিশেষ কোন জায়গা বা বিষয় বা মতবাদকে প্রণিধানযোগ্য করে লেখা হয়নি। কোনো তাত্ত্বিক গভীরতা বা ঐতিহাসিক ব্যাখ্যার খোঁজ নেয়া হয়নি। লেখক নিজের পোড়খাওয়া জীবন ও অর্জিত বিশ্বাসের ওপর ভর করে কালের স্বাক্ষী হয়েছেন।
মোহাম্মদ শামছুজ্জামান ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৬২ সালে ঝিকরগাছা, যশোরের এক সাধারণ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ঝিকরগাছা বাজার প্রাইমারি স্কুলে ১৯৭০ সালে প্রাইমারি শিক্ষা গ্রহণ শেষে ঝিকরগাছা বি.এম. হাইস্কুল থেকে ১৯৭৬ সালে এসএসসি এবং ঝিকরগাছা শহীদ মসিয়ূর রহমান ডিগ্রি কলেজ থেকে ১৯৭৮ সালে এইচএসসি পাস করেন। এরপর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭৯ সালে ভর্তি হয়ে ১৯৮৩ সালে মেকানিক্যাল ইজ্ঞিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। বিসিআইসি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডে চাকুরির পর সিভিল সার্ভিসের মাধ্যমে ১৯৮৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ রেলওয়েতে যোগদান এবং ফেব্রুয়ারি-২০২১ সালে মহাপরিচালক হিসেবে অবসরে গমন করেন। পেশার বাইরে তিনি সাহিত্যিক। নবম শ্রেণীতে পড়াবস্থায় লেখালেখির হাতেখড়ি। বিগত বত্রিশ বছরে ছোটগল্প, কবিতা, নিবন্ধ, স্মৃতিকথা অনিয়মিতভাবে লিখেছেন। ইতোমধ্যে তিনটি গল্প, তিনটি কাব্য ও একটি নিবন্ধ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে এক পুত্র সন্তানের জনক।