বাংলাদেশের বিশেষ ভূমি-বৈশিষ্ট্য গড়ে উঠেছে নদীপ্রবাহের কারণে। সুজলা-সুফলা এ দেশের প্রায় সর্বত্র ছড়িয়ে আছে নদনদী। নদীবাহিত পলি জমে এই গাঙ্গেয় দ্বীপের মাটি হয়েছে উর্বর। কিন্তু দীর্ঘকাল ধরে নানা কারণে বাংলাদেশের অধিকাংশ নদী মৃতপ্রায়। এর একদিকে আছে আন্তর্জাতিক হিসাব-নিকাশ, অন্যদিকে জাতীয়ভাবে আমাদের সিদ্ধান্তহীনতা ও ব্যর্থতা। অপরিকল্পিত নদী শাসন, সেতু-কালভার্ট-রাস্তা নির্মাণ, অবৈধ দখল, কলকারখানার বর্জ্য ফেলে দূষণ ঘটানো, নদী ভরাট হয়ে যাওয়া, এসবের ফলে বন্যা সমস্যা যেমন রয়েছে, তেমনি ভারত-চীন কর্তৃক উজানের আন্তর্জাতিক নদীতে বাঁধের ফলে বাংলাদেশের নদীগুলো বিপন্ন। অধিকাংশ নদীই শুষ্ক মৌসুমে পানিশূন্য হয়ে পড়ে। ঢাকাসহ শিল্পায়িত শহরাঞ্চলের পার্শ্ববর্তী নদীগুলো শিল্পবর্জ্য-দূষণে ভয়ানকভাবে বিপন্ন। একদিকে শিল্পকারখানার বিষাক্ত তরল, অন্যদিকে ক্ষতিকর কীটনাশকের কারণে নদীর মাছ বিলুপ্ত হতে বসেছে। এমনকি পরিবেশবান্ধব অন্যান্য জলজপ্রাণী ও উদ্ভিদ ধ্বংসের মুখে। সমুদ্র-উপকূলের নদীগুলোও দূষণে বিপর্যস্ত। তা ছাড়া নদী অপশাসনেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এসব জলাধার। নদীগুলো কীভাবে রক্ষা করা যায়, প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে পরিবেশের উন্নয়ন ঘটিয়ে কীভাবে সেগুলো পানিসম্পদের বিপুল ভাণ্ডার হিসেবে রাখা সম্ভব সেদিকেই আলোকপাত করা হয়েছে বাংলাদেশের নদী ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনা বইটিতে। নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য সৃষ্টি বিষয়ে বইটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।
ড. অশােক বিশ্বাস ১০ মে ১৯৭১ ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বাদুরগাছা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভূগােল ও পরিবেশবিদ্যা বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ থেকে Impact of Poverty Alleviation Programs on Environment: A Study of Jessore District বিষয়ের ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বাংলাদেশের ইতিহাস, ভূগােল ও পরিবেশবিদ্যা, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস, নৃবিজ্ঞান, বাঙালির লােকসংস্কৃতি, প্রত্নতত্ত্ব ইত্যাকার বহুমাত্রিক বিষয়ে গভীর আগ্রহ নিয়ে অধ্যয়ন করেন। তিনি ২০০১ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) ক্যাডারে যােগদান করেন। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিগােষ্ঠীগুলাের সামাজ-সংস্কৃতি-ভাষা ও তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্ভাবনা নিয়ে গ্রন্থ ও প্রবন্ধ লেখেন দীর্ঘদিন ধরে। তার প্রকাশিত গ্রন্থ : বাংলাদেশের রাজবংশী; সমাজ ও সংস্কৃতি (বাংলা একাডেমি, ২০০৫), বুনাে (সােসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট, ২০০৮), বাংলা ভাষায়। ভােটবর্মী ভাষার প্রভাব (বাংলা একাডেমি, ২০০৮), বাংলাদেশের নদীকোষ (বেঙ্গল পাবলিকেশনস লিমিটেড, ২০১৫), ঝিনাইদহ জেলার ইতিহাস, মাগুরা জেলার ইতিহাস ইত্যাদি। তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন। জার্নালে মাঝে মাঝে লিখে থাকেন।