স্পেশাল সন্তানের মা হওয়ার কারণে জীবনের একটি অংশ দেখার সুযোগ হলো আমার। সমাজে এসকল শিশুরা নানাভাবে অবহেলার শিকার হয়ে থাকে। এসব শিশুরা ব্যাপক বৈষম্য ও কুসংস্কারের শিকার হয়। এছাড়া তাদের অধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ বা কর্মক্ষেত্রের বৈষম্যই মূল। সমাজের অনেকের ধারণা এসব শিশুরা অভিশাপ বা এটি একটি পাপের শান্তি স্বরূপ হয়েছে। ফলে সবাই তাদের অবহেলার দৃষ্টিতে দেখেন। তাই ভেতর থেকে এসব শিশুদের জন্য কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করি। ইংল্যান্ডে বাস করেলও আমি মনেপ্রাণে বাঙালি, বাংলাদেশ আমার দেশ, আমার শিকড়। এদেশে যেমন নির্মল ভালোবাসা আছে, তেমনই শিক্ষার অভাব ও আমাদের বাচ্চাদের নিয়ে অজ্ঞতাও আছে। প্রতিটি মানুষ অর্থাৎ বাবা-মা যখন প্রথম জানতে পারে যে তাদের সন্তান আর অন্য একটি সন্তান থেকে আলাদা, তখন থেকেই জীবন যুদ্ধ শুরু হয়। অসহায় হয়ে পড়ে প্রতিটি মুহূর্তে। আমি ভিতরে ভিতরে তাগিদ অনুভব করি কিভাবে পৌঁছাবো আমার অভিজ্ঞতা এদের কাছে? কিভাবে জানাবো ওরা একা নয়? কিভাবে ওরা শেখবে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে? কিভাবে শেয়ার করবে নিজের বুক ফাটা কষ্টগুলো? কিভাবে হাসি ফুটবে এদের মুখে? দুঃখের যে ছায়া ছুঁয়ে যায় চোখের উপর, তা কেমন করে দূর হবে? এ ভাবনাগুলোর উত্তর খুঁজে পেতে এবং আমার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য বন্ধুরা আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। আর সেই অনেক ভাবনার গাথা মালা বাস্তবে রূপ দিতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য একটা সংস্থা গড়ে তুলি। বন্ধু শাখাওয়াতের দেওয়া নাম থেকে Rupa's Vision এর যাত্রা শুরু হয়। Rupa's Vision এর নানা রকম কার্যক্রমের পাশাপাশি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের নিয়ে কাজ করা ব্যক্তি এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের মায়েদের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বই প্রকাশ করছি। যার নাম 'বর্ণিল সুতোর সেতু’। আশা করি সকল শ্রেণীর পাঠকের কাছে বইটি সমাদৃত হবে।
মেহেদী জাহান কবির, যিনি রূপা কবির নামে পরিচিত ১১ই এপ্রিল জামালপুর জেলায় একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মরহুম আনিসুর রহমান এবং মা রহিমা খাতুন এর একমাত্র কন্যা সন্তান, চার ভাইয়ের একমাত্র বোন। দশ বছর বয়সে তিনি তাঁর বাবাকে হারান, তারপর থেকে মা'ই ছিলেন বাবা আর মা। বাবা স্কুলে শিক্ষকতা করতেন আর মা চাকুরীজীবি ছিলেন। ১৯৯০ সালে জামালপুর সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৯২ সালে জামালপুর আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে এইচএসসি, এরপর ঢাকা হোম ইকোনোমিকস কলেজে ভর্তি হন আর্টস এন্ড ক্রেফটস অনার্স করার জন্য। ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষার পর বিয়ে হয় যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী এহসানুল কবিরের সাথে। স্বামী এহসানুল কবির এবং শাশুড়ি মরহুমা রওশন আরার আগ্রহে হার্টফোরডশার ইউনিভার্সিটি থেকে বিজনেস ম্যানেজমেন্টের উপর পড়া শেষ করেন। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে এডমিন ডিপার্টমেন্টে কাজ শুরু করেন। এই কাজটির জন্য মেডিক্যাল টার্মের উপর দুই বছর পড়াশোনা করতে হয়েছিল। বড় সন্তান সামিন কবির স্পেশাল ছেলে, যার কাছে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি Rupa's Vision প্ল্যাটফর্ম খুলেন। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। ২০১৩ সালে পহেলা বৈশাখ পালন করার সময় পনেরেশো লোকের সামনে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা আর আবৃত্তি দিয়ে তার সাংস্কৃতিক জগতে পদচারণা। স্কুল জীবন থেকেই বই পড়তে ও ভ্রমণ করতে প্রচন্ড ভালোবাসতেন। নতুন কিছু শেখার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ তাঁর। Rupa's Vision এর মাধ্যমে তিনি তাঁর মতোন পরিবারের পাশে থাকতে চান, মায়েদের পাশে থাকতে চান। স্বপ্ন দেখেন একদিন এই রূপা'স ভিশন দিয়ে মানুষের কষ্ট দূর করতে পারবেন বর্তমানে তিনি স্বামী এহসানুল কবির এবং দুটি সন্তান সামিন কবির আর মাহিমা কবিরকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন।