জীবনান্দের কবিতাতেই পাঠক পেয়েছেন একই সঙ্গে যুগ সংকটের সত্যতম প্রতিবিম্ব আর নিত্যকালের রোমান্টিক নিবিড়তার স্বাদ। অ – দৃষ্টপূৰ্ব দৃষ্টিকোণ; ও – পূর্বভাবিত ভাবনা; আর সতেজ, সাহসী ও আশ্চর্য অভিব্যাক্তময় ভাষা। চিত্রকল্পের অভিনব বহুমাত্রিকতা নিয়ে জীবনানন্দ – প্রধানত জীবানানন্দই হয়ে উঠলেন বাংলার আধুনিক কবিদের অবিসংবাদিত প্রতিনিধি। এখানে সন্নিবেশিত হলো জীবনানন্দের দশটি কবিতা এবং প্রতিটি কবিতার চারটি করে ভাষান্তর। চারটি প্রধান ইউরোপীয় ভাষা – ইংরেজি, ফরাসি, স্পেনীয় এবং জার্মান – আমরা বেছে নিয়েছি। জীবনানন্দের মাপের একজন কবিকে দশটি মাত্র কবিতা দিয়ে কখনো বোঝা যায় না। তবুও সেই অসম্ভবকে স্পর্শ করার অক্ষম প্রয়াস এই সংকলন। প্রথম কবিতাটি ‘ রূপসী বাংলা ‘ সংকলনের দ্বিতীয় কবিতা। রূপসী বাংলা সংকলনের কবিতাগুলিতে প্রকাশ পায় বাংলার প্রকৃতি ও গ্রাম জীবনের শান্ত সৌন্দর্য মগ্ন মুগ্ধতা। জীবনানন্দ এক অসামান্য রোমান্টিক কবি। ‘ বনলতা সেন ‘ তাঁর সুবিখ্যাত রোমান্টিক প্রেমের কবিতা। প্রেমের সঙ্গেই বহু উপলব্ধির সংশ্লেষ এই কবিতায়। ‘ ঘাস ‘ কবিতায় মূর্ত হয়ে ওঠে নিসর্গের নিবিড় ইন্দ্রিয় – সংবেদন। ‘ হরিণেরা – ও ‘ রোমান্টিক সৌন্দর্য দৃষ্টির কবিতা। প্রকৃতির রূপময়তাকে দেখা হয়েছে কিছুটা সুররিয়েলিস্তিক ভঙ্গিতে। ‘ কমলালেবু ‘ কবিতায় উঠে এসেছে জীবনের অতি পরিচিত কোনো দৃশ্যের মধ্যে জীবনের সুমহান বিপুলতার সংহত ছায়া। নিজের প্রাণকে আর্তের জন্য উৎসর্গ করে দেওয়াই যে জীবনের পূর্ণতম চরিতার্থতা। ‘ ভিখারি ‘ কবিতাটিতে ধারা পড়েছে জীবনের কঠোর বাস্তবতা – মানব সভ্যতার ভয়াবহ বৈষম্য ও অসংগতি। জীবনানন্দ এক গভীর সমাজ মনস্ক কবি ছিলেন। ‘ আকাশলীনা ‘ তাঁর আরো একটি আশ্চর্য প্রেমের কবিতা। প্রেয়সী এখানে বাস্তবের ভূমি থেকে ক্রমে আকাশ – মৃত্তিকাব্যাপ্ত সমগ্র ধরিত্রীতে লীন হয়ে গেছে। ‘ অদ্ভুত আঁধার এক ….. ‘ কবিতাটিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নিষ্ঠূরতা, বোমা বিস্ফোরণের ভয়ঙ্করতা তথাকথিত মানব – সভ্যতায় বীতশ্রদ্ধ কবির নৈরাশ্যের – তিক্ত হৃদয়ের ছবি প্রতিফলিত হয়েছে।
জন্ম ১৯৪৬, ২৪ এপ্রিল। পিতা ডাক্তার বিভূতিভূষণ সরকার। মাতা স্নেহকণা সরকার। উভয়েই প্রয়াত। পশ্চিমবাংলার পশ্চিমপ্রান্তিক ছোটো শিল্প-শহর কুমারডুবিতে কাটে বাল্য, কৈশোর। বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করেছেন কুলটি গার্লস হাইস্কুল-এ (১৯৬১), কলেজের পাঠ সম্পন্ন হয়েছে আসানসোল গার্লস কলেজ-এ (বি.এ. ১৯৬৫)। বাংলায় এম. এ. ১৯৬৭-তে, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। মাইথন কলেজ ও ভাগলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে কিছুদিন কাজ করবার পর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ (১৯৭২)। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপিকা। বিবাহ ১৯৭৪, স্বামী প্রয়াত প্রবীর কুমার চক্রবর্তী। বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুরের অধিবাসী, সুমিতা চক্রবর্তী পঠন-পাঠন ও নিজের লেখালিখির জগতেই থাকেন। এযাবৎ প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা উনিশটি। অগ্রন্থিত প্রবন্ধ অনেক। সম্পাদিত গ্রন্থ আটটি। উল্লেখযোগ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত 'বাংলা কাব্য পরিচয়’ সংকলনের পুনঃসম্পাদিত সংস্করণ। প্রধানত বিংশ শতাব্দীর সাহিত্যে তাঁর বিচরণ। সাহিত্যতত্ত্বেও আগ্রহী।