বাংলাদেশে গাছ কেটে, খাল-বিল-নদী ভরাট করে, ভূমির উপরিভাগের মাটি পুড়িয়ে ইট বানিয়ে, শিল্প ও মানব বর্জ্য সরাসরি পরিবেশে উন্মুক্ত করে, নদীতে ফেলে, জলাভূমিতে আবাসন ও নগরায়ণ করে দেশজ প্রবৃদ্ধি বা জিডিপি বাড়ানো হয়। পরিবেশ সুরক্ষার প্রশ্নে বাংলাদেশের উন্নয়নের এই মডেলকে একেবারেই ভঙ্গুর বলা যায়। এটাকে পরিবেশের ওপর চালানো একধরনের ‘উন্নয়ন সন্ত্রাস’ বলা চলে। নাগরিক এবং সরকার উভয়েরই পরিবেশগত দায়বদ্ধতা শুধু শূন্য নয়, বরং বহু ক্ষেত্রে বেশ ঋণাত্মক। আমাদের উন্মুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিতান্তই হীন, নদী পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চূড়ান্ত পর্যায়ে অটেকসই। উন্নয়ন প্রকল্পে পরিবেশগত ঝুঁকিগুলোকে আমলে নিয়ে তার বিপরীতে পর্যাপ্ত পরিবেশগত সুরক্ষা না নেওয়ার যে সংস্কৃতি, তাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর চেষ্টা করা হয়েছে এই পুস্তকে। পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে প্রাণ ও পরিবেশ বিষয়ক ইস্যুগুলোর সংযোগ ঘটিয়ে দেওয়াও লেখকের অন্যতম উদ্দেশ্য। নাগরিক ও সরকারের নিত্যদিনের পরিবেশবিরুদ্ধ অপচর্চার বিষয়ে খোলামেলা আলোচনার পাশাপাশি পুস্তকে কিছু সমাধানও প্রস্তাব করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির মুখে পুস্তকের বিষয়বস্তু বিশ্ব পরিসরে বহুল আলোচিত হলেও বাংলাদেশের সমাজে এসব নতুন ধারার চমকপ্রদ কথা বলে মনে হতে পারে। বাঁচতে হলে চ্যালেঞ্জ জানাতে হবে আমাদের পরিবেশ ধ্বংসের নির্বোধ সংস্কৃতিকে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ, ১৯৮০ সালে কুমিল্লা জেলার লাকসাম (মনোহরগঞ্জ) উপজেলার খিলা ইউনিয়নের বান্দুয়াইন গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ইলেক্ট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক। তিনি ১৯৯৭ সালে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৯৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল-এ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৫ থেকে ২০০৭ সময়কালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ অধ্যয়ন করেন। ২০০৫ থেকে অদ্যাবধি টেলি যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ হিসবে বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে তিনি সিনিয়র সফটওয়্যার সল্যুশন আর্কিটেক্ট হিসেবে ‘ভোডাফোন জিজ্ঞো’ নেদারল্যান্ডস-এ কর্মরত আছেন। ইতিপূর্বে তিনি এলকাটেল লুসেন্ট বাংলাদেশ, টেলিকম মালয়েশিয়া বাংলাদেশ একটেল (বর্তমান রবি), এমটিএন কমিউনিকেশনস নাইজেরিয়া, এরিকসন নাইজেরিয়া, এরিকসন ঘানা, এরিকসন দক্ষিণ কোরিয়া, এরিকসন নেদারল্যান্ডস এ কাজ করেছেন। পেশাগত জীবনে তিনি দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ এবং পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ডিজাইন ও বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। জনাব ফয়েজ তৈয়্যব একজন ‘টেকসই উন্নয়ন ও অবকাঠামো’ বিষয়ক প্রবন্ধকার। টেকসই উন্নয়নের নিরিখে বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের কাঠামোগত সংস্কার, সুশাসন, প্রতিষ্ঠানিক শুদ্ধিকরন এবং প্রযুক্তির কার্যকরীতার সাথে স্থানীয় জ্ঞানের সমন্বয় ঘটিয়ে বাংলাদেশের ছোট বড় সমস্যা সমাধানের পর্যালোচনা করে থাকেন। তিনি তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং পেশাদারিত্বের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে দেশের আর্থ সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চান। তাই এসকল বিষয়ে তাঁর নিজস্ব মুক্ত চিন্তা স্বাধীন ভাবে প্রকাশের প্রয়াস করেন। তাঁর লিখায় যা বিশেষ ভাবে গুরুত্ব পায়ঃ সাস্টেইনএবল ডেভেলপমেন্ট এর নিরিখে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন পদ্ধতিগত দিক, বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্পের ডিজাইন ত্রুটি, অর্থনীতি শিক্ষা স্বাস্থ্য ও কৃষি ইত্যাদি খাতের কারিগরি ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামোগত সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তনের কারিগরি প্রস্তুতি, ম্যাক্রো ও মাইক্রো ইকোনমিক ম্যানেজমেন্টের কারিগরি দিক এবং অটোমেশন। সামাজিক সংযোগের দিক থেকে উনি একজন টেকসই উন্নয়ন কর্মী, ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। গ্রীণপিস নেদারল্যান্ডস এর সদস্য। দৈনিক বণিকবার্তা, দৈনিক শেয়ারবিজ ও দৈনিক প্রথম আলো অনলাইনের উপসম্পাদকীয় কলাম লেখক।