পটভূমি ছোটোগল্পকার পুনরায় দেখতে পেলেন তাঁর জানলার গ্রিলে দাঁড়কাকের জ্বলন্ত দৃষ্টি, করাল নিয়তির মতো তাকে লক্ষ করছে; ফ্যাকাশে কুয়াশার ভিতর দিয়ে আরও দেখেন, পাশের ছাদে এক নারী ভেজা শাড়ি দড়িতে মেলে দেয়, কুয়াশায় ঘন হয়ে শাড়ির লাল পাড় রক্তশূন্য-বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। গল্পকার দিব্যি দেখেন সহবাস মাখা মিষ্টি গন্ধের ভেজা শাড়ির ওপর আর একটি কাকের নির্বিঘ্নে মলত্যাগ। নারীটির তখন ফাঙ্গাস পড়া দেওয়ালে হাত রেখে চলটা ওঠা সিঁড়ি বেয়ে ক্রমে নীচে নামতে নামতে বুড়ো আঙুলের নখ উলটে যাওয়ার দশা হল একবার। জানলার গ্রিলে দাঁড়কাকের চোখ ক্রুর হাসিতে ঝলসে ওঠে। ছাদের ইট-সুরকির ওপর কালো ঠোঁটের আর একটি কাক পায়ের নখে বিঁধিয়ে বাচ্চা জালালী কবুতরের চোখ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে খাচ্ছে। বাসি বিছানার মধ্যে জবুথবু হয়ে গল্পকার এসবই দেখলেন । এ দেখবার প্রবৃত্তি তার মধ্যে স্বতঃক্রিয়াশীল। দাঁড়কাক, ভোর, সহবাসের গন্ধমাখা ভেজা শাড়ি, কুয়াশায় বিষণ্ণ লাল রং, জালালী কবুতরের খুন হওয়া সবই তিনি দেখেন; হিমশীতল শ্বাস ফেলে গভীরে বিচলিত বোধ করেন। ছোটোগল্পকার বা শিল্পী শুধু দৃশ্য দেখেন না, দৃশ্য বা বস্তুর বস্তুগত উপকরণ উপলক্ষ মাত্র, প্রতিপাদ্য নয়। চাক্ষুষ বাস্তবতা বা অপটিক্যাল দৃষ্টির বাস্তবতা, দৃশ্যমানতা নিঃশেষ হয় তার উপকরণগত বাস্তবতা নিয়ে; গল্পকার ওই বাস্তব অতিক্রম করে অন্তর্গত স্পন্দনে অনুভূতি আলোড়িত হন। তাঁর কলমে সেই অনুভূতির অন্তঃসার জীবন্ত হয়। তথাকথিত আলেখ্য না হয়ে নির্মিত হয় বাস্তবের অভ্যন্তরীণ স্বরূপ। অনুভব ও অভিজ্ঞতার নতুন দৃশ্যপট।