'নিমেষে শশব্যস্ত লোকজনের চেঁচামেচিতে তলিয়ে যায় রাস্টি। রাস্তাটা খুব ঘিঞ্জি, বেশ গরম লাগছে, চারদিক দোকানদারদের চেঁচানি, গোরু-ষাঁড় আর তাদের গোবরের উৎকট গন্ধে ম-ম করছে। বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েরা গলির মধ্যে কিতকিত খেলছে, খুচরো পয়সা দিয়ে বাজি ধরাধরি চলছে, আবার কেউ কেউ পচা ড্রেনের মধ্যে ডুবে যাওয়া পয়সার ভাগ নিয়ে মারপিট জুড়েছে। গোরুগুলো লোকজনের ভিড়ে অলসভাবে চলাফেরা করছে, মাঝেমধ্যে ইতিউতি পড়ে থাকা কাগজ কিংবা পচা সবজি শুঁকছে; এর মধ্যে যারা একটু সাহসী তারা আবার সটান খোলা স্টলে হানা দিচ্ছে। আর এই বিষম হইচই ছাপিয়ে কোনো লাউডস্পিকার থেকে বাজারচলতি একটা গানের সুর কান ফাটিয়ে দিচ্ছে। ভিড় ঠেলে রাস্টি এগিয়ে যায়। রাস্তার দু-ধারে সারি সারি প্রেতের মতো শুয়ে থাকা ভিখিরির দৃশ্য তাকে মুগ্ধ করে। উলঙ্গ ভিখিরির দল, ক্ষয়ে যাওয়া চেহারাগুলো দেখে ঠিক মানুষ বলে মনে হয় না, জ্যান্ত কঙ্কালের ঢিবি, সারা গায়ে ঘা দগদগ করছে; বুড়োগুলোকে মৃত্যু যেন ডাকছে, বাচ্চাগুলোর অবস্থাও তথৈবচ, তার মধ্যেই মায়েরা তাদের শিশুদের পরম মমতায় স্তন্যপান করাচ্ছে— জীবন ও মৃত্যুর এই আশ্চর্য বন্ধুত্ব রাস্টি সম্মোহিতের মতো দেখতে থাকে, কিন্তু এই মানুষগুলো তার মনে দাগ কাটে না। হয়তো তাদের আর মানুষ বলে চেনা যায় না কিংবা সে ওই অবস্থায় নিজেকে কল্পনা করতে পারে না। আবার এই বাজারে বাকিরা কি তাকে দেখছে? কিছু ভাবছে? মনে হয় না। এলাকার ওই গোরু কিংবা লাউডস্পিকারের মতোই এই ভিখিরির দলও প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে বেড়ে উঠেছে। শুধু পয়সাওলা লোকজন নিজেদের প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ কিছু খুচরো পয়সা তাদের দিকে ছুড়ে দেয়, হয়তো বিবেকের প্রশ্নে ব্যতিব্যস্ত হয়ে, সে হোক, তবু ওরাই এই জীবন্মৃতদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।'