মাফিয়া-পরিবেষ্টিত আতঙ্কপীড়িত একটি গ্রামের কলেজে ইংরেজি সাহিত্যের তরুণ অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন কেডি স্যার। অচিরেই ছাত্রছাত্রী এবং এলাকার মানুষের নয়নের মণি হয়ে ওঠেন তিনি। মাদক-চোরাচালান, অস্ত্র এবং জালনোট পাচারের মতো অন্ধকার জগতের মুখোমুখি হয়ে পড়েন খুব শীঘ্রই। দ্রুত তিনি ডুবে যেতে থাকেন অন্ধকারাবৃত সেই নৃশংস জগতে। তবুও প্রতিমুহূর্তে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সংবদ্ধ করতে চেষ্টা চালিয়ে যান এলাকার সকল মানুষকে। রুখে দাঁড়ানোর মন্ত্র আর আত্মবিশ্বাসের বীজ বুনে দিতে থাকেন তাঁর প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। অন্ধকারের বৃত্তজুড়ে আঁকতে থাকেন আলোর রেখা। দমবন্ধ করা অ্যাকশনের মধ্যেই ফিরে-ফিরে আসে কেডি স্যারের পুরনো জীবন, নয়ের দশকের আবছায়া, ফেলে আসা রূপকথার মতো কৈশোরকাল, তাঁর প্রেম, বিরহপীড়িত নিঃসঙ্গতা প্রভৃতি। এই উপন্যাস সমান্তরাল রেখার মতো এগিয়ে চলে তরতরিয়ে, যার একটি দিকে থাকে দমবন্ধ-করা সাসপেন্স, আর অপর দিকে চাঁদ-জ্যোৎস্নার আলোর মতো মায়াবী স্নিগ্ধতা। অনেক অন্ধকার আর রক্তাক্ত ইতিবৃত্ত পেরিয়ে এই কাহিনি ছুটে চলে পরিসমাপ্তির দিকে, যেখানে পৌঁছে এক অদ্ভুত তৃপ্তি আর মনখারাপের আঙিনায় এসে পড়েন পাঠক। হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা এই উপন্যাসের প্রতিটি শব্দ তৈরি করে এক সোনালি আবেশ আর অকৃত্রিম মাদকতা। অস্ত্র-চোরাচালান, মাদকপাচার আর মাটিমাফিয়াদের বিরুদ্ধে তীব্র হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখে এই উপন্যাস। ভীতসন্ত্রস্ত আভাসপুর গ্রামের প্রতিটি কোণে জেগে থাকে চাপা উত্তেজনা আর লড়াইয়ের ইতিবৃত্ত। একদিকে অনাহত আলোকের বিবরণী, আর অন্যদিকে অতীতের কোনও বসন্ত বিকেলের কথা! একদিকে বোমা-বারুদ আর আগ্নেয়াস্ত্র, অন্যদিকে মুসাফিরনগরে রঙ্গনফুলের আভার মতো ছড়িয়ে থাকা আবেগবিহ্বলতা — এই সবটুকুই উপন্যাসটির মূল উপজীব্য। পৃথিবীজাত অনেক ঘৃণা , লোভ, লালসা পেরিয়েও যে এক প্রগাঢ় ও সহজ চেতনা আচ্ছন্ন করে তুলতে পারে মানুষকে, হৃদয়ে সৃষ্টি করতে পারে এক আনন্দ, এক যন্ত্রণা, এক কাব্য, আবহমান অস্তিত্বের গভীরে অনুরণন তুলতে পারে হঠাৎ, সাদা কাগজের মতো ম্লান হয়ে যাওয়া জীবনজুড়ে শুরু হতে পারে রঙের হোলিখেলা, এই উপন্যাসটি সেই দিকটিকেই নির্দেশ করে।