আমাদের নতুন ভ্যাট আইনের বোনাস জুলিয়াস সিজার (এটি) ব্যবসায়ীর জন্য সুখকর না হলেও ক্যারিশমেটিক ভ্যাট আইনপ্রণেতারা বিনা সুদে সরকারি কোষাগারে হাজার হাজার কোটি টাকা জমা করার এক মহাপরিকল্পনা নিয়ে ভ্যাট আইনে প্রথম সিজারিয়ান বেবির জন্ম দেন। খেলা শেষ হওয়ার দশ মিনিট আগে যে অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে আসে তাকে সারা মাঠেই দেখা যায়। আগের আশি মিনিট খেললে দম বোঝা যেত। নতুন কেউ কোনো কোম্পানিতে এলে এমন আচরণ করে যে, এক দিনে সব লাভ করে দেবে। কোনো এক গ্রামের রাস্তা দিয়ে চাচা ও ভাতিজা হেঁটে যাওয়ার সময় পাশ থেকে চাচার পরিচিত একজন ডেকে জানতে চাইলেন, ভাই আপনার সাথের ছেলেটা কে? চাচা লোকটাকে উত্তরে বলে দিলেন- সাথের ছেলেটা উনার শালা। কথাটা বলার সাথে সাথে ভাতিজা চাচার কাছে এভাবে উত্তর দেয়ার কারণ জানতে চাইল। তখন চাচা ভাতিজাকে বোঝাতে চাইলেন এ উত্তরে আমাদের মধ্যে সম্পর্কের পরিবর্তন হয়নি কিন্তু ধর উনাকে যদি তোকে আমার ভাতিজা বলতাম তাহলে লোকটা জানতে চাইত কোন ভাইয়ের ছেলে, কত নম্বর ছেলে, ওর বাবা এখন কোথায় থাকে- এরকম শত প্রশ্ন করতেন আর আমি যদি সেগুলোর উত্তর না দিতাম তাহলে উনার অসম্মান হতো। আমাদের দেশের ভ্যাট আইনের অবস্থা ঠিক এই গল্পের মতো, ব্যবসায়ীরা যদি ভ্যাট অফিসারের শালা হয়ে পারিবারিক ব্যবসায়ের লাভের কিছু অংশ দুলাভাইয়ের মাধ্যমে বোনকে প্রদানের মতো সহজ সমাধানের পথে না হেঁটে প্রকৃত সত্য অর্থাৎ সঠিক ভ্যাট আইন মানতে যান তাহলে এক মূসক ফরম ৯.১ পূরণের তথ্যের জন্য ৬৪টি সাব ফরম পূরণের তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে। এখন ব্যবসায়ীদের অবস্থা এমন যদি ভ্যাট অফিসার বলেন, ব্যাটা তোকে এখনই বেঁধে নিয়ে যাব। ব্যবসায়ী কিছুটা সাহস সংগ্রহ করে বললেন আমার কি পা নেই? এবার ভ্যাট অফিসার রেগে বলেন, কী, তুই আমাকে লাথি দিবি? তখন ব্যবসায়ী নরম গলায় বলবেন, না স্যার, আমি পা দিয়ে ব্যবসায় ফেলে দৌড়ে পালাতে চাইছি। TRC- রাজস্ব ভাবনা নামে একটি সংগঠন তৈরি করতে চেষ্টা করছি যার স্লোগান হলো- স্বচ্ছ- স্বচ্ছ আইনের সহজ প্রয়োগে ব্যবসায়ীরা স্বচ্ছ হবেন। দক্ষ- ভ্যাট আদায় ও প্রদানে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। ন্যায্য- আগের দুটির সমন্বয়ে সরকার ন্যায্য ভ্যাট পাবে এবং ব্যবসায়ীরাও ন্যায্য সম্মান পাবেন।
লেখক পরিচিতি: মোঃ আলিমুজ্জামান। লিড কনসালটেন্ট টিআরসি। পারিবারিকভাবে তিনি একজন রত্নাগর্ভা স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত মায়ের সন্তান। তিনি ১৯৯৮ সালে বসুন্ধরা গ্রুপের মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। ২০১৯ সালে ক্রাউন সিমেন্ট গ্রুপ এর মহাব্যবস্থাপক (ভ্যাট, ট্যাক্স ও কাস্টমস) হিসেবে চাকরি জীবন শেষ করেন। ক্রাউন সিমেন্ট এ নয় বছর চাকরি কালে এনবিআরে ভ্যাট-ট্যাক্স কাস্টম নিয়ে কোনো জরিমানা অথবা মামলা না থাকায় সেরা কমপ্লায়েন্স প্রতিষ্ঠান হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। এরপর ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে স্বচ্ছ- ভ্যাট আইনে, দক্ষ- ন্যায্য ভ্যাট প্রদানে এই স্লোগান বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন দি রিয়েল কনসালটেশন (টিআরসি) নামের একটি ভ্যাট কনসাল্টিং ফার্ম। চারবার শুরু থেকে শুরু করা অদম্য সাহসী এক মানুষ। তিনি সব সময় ভ্যাট আইন মেনে নয় ব্যবসা যেভাবে পরিচালিত হয় সে অনুযায়ী ভ্যাট আইন তৈরি করতে অভ্যস্ত। তিনি পেশার দায়বদ্ধতা থেকে ভ্যাট পেশার থাকা মানুষদের নিয়ে সেমিনার ও নিয়মিত টেনিং করে যাচ্ছেন। 'সঠিক ভ্যাট ব্যবস্থাপনায় দ্রব্যমূল কমানো সম্ভব’ এই স্লোগান নিয়ে দিনের পর দিন প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বিভিন্ন পেশার ব্যবসায়ীদের এবং কথা বলছেন সোশ্যাল মিডিয়াতে, নিউজ পেপার এর জন্য আর্টিকেল লিখেছেন এবং এই বইও সেই সেবা কর্মেরই একটি অংশ। সাধারণ ব্যবসায়ীগণ ও ফ্যাট পেশায় কাজ করা মানুষদের সেবা করার মধ্য দিয়েই একসময় তিনি হয়ে ওঠেন ভ্যাটবন্ধু আলিমুজ্জামান।