লায়লার ফাঁসি হবে, ব্যাপারটা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না লায়লার স্বামী আমিন। কারণ লায়লা কোনো অপরাধ করেনি, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও নেই। নিরপরাধ একজন মানুষের ফাঁসি হবে কেন?
অথচ সে জানে লায়লার ফাঁসি হবেই হবে। কারণ লায়লা যা বলে তা কখনো মিথ্যা হয় না। লায়লাকে বাঁচাতে তখন মরিয়া হয়ে উঠে আমিন। শেষ পর্যন্ত কোনো উপায় না পেয়ে ছুটে যায় ডাক্তার তরফদারের কাছে। লায়লা এবং আমিনের ধারণা যে সম্পূর্ণ মিথ্যা তা প্রথম দিনেই প্রমাণ করে দেওয়ার চেষ্টা করেন ডাক্তার তরফদার।
কিন্তু বাঁধ সাধে লায়লার সৃষ্ট এক সুরের গান। এই সুরের গানের উৎস খুঁজতে গিয়ে ডাক্তার তরফদার হারিয়ে যেতে থাকেন নীল জোছনার জীবন নামক রহস্যময় এক জীবনে, যে জীবন লায়লাকে ভবিষ্যৎ বলার ক্ষমতা দিয়েছে, অতীত দেখার ক্ষমতা দিয়েছে, দিয়েছে অসহায় হতদরিদ্র মানুষের প্রতি তীব্র ভালোবাসা সৃষ্টির ক্ষমতা। ডাক্তার তরফদার উপলব্ধি করেন লায়লার জীবন প্রবাহের গতি পৃথিবী কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত নয়, নিয়ন্ত্রিত নীল জোছনার জীবনের অদৃশ্য এক শক্তি কর্তৃকÑ যে শক্তি ধীরে ধীরে লায়লাকে ফাঁসির দিকেই ধাবিত করছে। তারপরও হাল ছাড়েন না তিনি।
নীল জোছনার জীবনের অদৃশ্য ঐ শক্তিকে থামিয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু প্রত্যেকবারই ব্যর্থ হতে থাকেন তিনি। একসময় হোঁচট খেতে খেতে সত্যি হাল ছেড়ে দেন। ফাঁসির দড়ি তখন লায়লার একেবারে সামনে।
শেষ পর্যন্ত কি লায়লা বাঁচতে পেরেছিল? আর কী-ই-বা ছিল সেই নীল জোছনার জীবনের রহস্য?
লেখক মোশতাক আহমেদ এর জন্ম ১৯৭৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ফরিদপুর জেলায়। পেশায় একজন চাকুরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও লেখালেখির প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রচুর। এ পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশন নিয়েই সবচেয়ে বেশি লিখেছেন। বাংলা সায়েন্স ফিকশন জগতে তার পোক্ত একটি অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও মোশতাক আহমেদ এর বই সমূহ ভৌতিক, প্যারাসাইকোলজি, মুক্তিযুদ্ধ, কিশোর ক্ল্যাসিক, ভ্রমণ ইত্যাদি জঁনরাতে বিভক্ত। যেকোনো একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতেই পছন্দ করেন। মোশতাক আহমেদ এর বই সমগ্র সংখ্যায় পঞ্চাশ পেরিয়েছে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ছিল ‘জকি’। এটি একটি জীবনধর্মী উপন্যাস। ২০০৫ সালে এটি প্রকাশিত হয়। মোশতাক আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথমে ফার্মেসি বিভাগে, পরে আইবিএতে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশোনার খাতিরেই হোক বা কর্মজীবনের তাগিদেই হোক, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেক ভ্রমণ করেছেন। সেসব ভ্রমণকাহিনীর আশ্রয়ে তাই ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনীগুলোও। তাঁর সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শুধু লেখালেখিতেই গণ্ডিবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাজারবাগের পুলিশ ও পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সে ঘটনার ওপর ভিত্তি করে মোশতাক আহমেদ ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এটি ২০১৩ সালের মার্চ মাসে মুক্তি পায়। তাঁর পুরস্কারের ঝুলিতে এ পর্যন্ত রয়েছে ২০১৩ সালের কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের কৃষ্ণকলি সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৫ সালের সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার এবং সর্বশেষ সংযুক্তি হিসেবে সায়েন্স ফিকশন বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭।