মওলানা ভাসানী কেবল একটি নাম নয়। একটি আদর্শ, একটি চেতনা ও একটি প্রতিষ্ঠান। জীবনের শুরু থেকেই আমরা তাঁর চেতনা ও আদর্শে উদ্ধুদ্ধ হয়ে শুধু তাঁর বস্তুবাদী রাজনৈতিক চেতনার অনুসারী হিসেবে নয়, ঐশী রুহানী জগতের অনুসারী হিসেবে পথের দিশা পেয়েছিলাম। আজও সেই দিশা বুকে ধারণ করে জীবন সায়হ্নে উপনীত হয়েছি। এক দিকে তিনি শান্তিবাদী, অপরদিকে তিনি ‘ফুক্কা কুল্লে নেজামিন’র ঝান্ডাধারী। এখানেই তিনি অন্য সবার থেকে আলাদা- মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাশরী আর হাতে রণতূর্য। তাঁর নির্দেশেই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধে জানবাজি লড়াই করেছি। কৃষক শ্রমিক রাজ কায়েম করতে স্বপ্নবিভোর থেকেছি। দেশের প্রায় প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছি। জীবনের এই সন্ধ্যালগ্নে আজও কৃষক শ্রমিক মেহনতি জনতার মুক্তির স্বপ্ন দেখি। সেই সাথে সত্যিকারের কর্মী ও সংগঠনের অভাব দেখে পীড়া বোধ করি। এই রকম এক ক্রান্তিকালে আজাদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তরুণ ‘ভাসানী পরিষদ’ গঠন করলে আমি তাদের মনে-প্রাণে সহযোগিতা করি। তাদের উৎসাহ দিতে আমি এই অশিতিপর বয়সে ভাসানী পরিষদের সভাপতি হতে সম্মতি প্রদান করি। সময়ে সময়ে তাদেরকে সাধ্যমতো দিকনির্দেশনা দিই। সেসব নির্দেশনা পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করতে না পারলেও তাদের চেষ্টা ও সসতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। সীমাবদ্ধতার মাঝেও ভাসানী কর্মী হিসেবে তাদের মওলানা ভাসানীকে জানবার ও জানাবার প্রবল আগ্রহ রয়েছে। আশা করি শত প্রতিকূলতার মাঝেও ‘ভাসানী পরিষদ’ দেশে-বিদেশে মওলানা ভাসানী ও তাঁর কর্মকে তুলে ধরতে সক্ষম হবে। আমার সেই আশার পালে হাওয়া দিতে আমার অত্যন্ত স্নেহের লেখক সাংবাদিক গবেষক আরেফিন বাদল ভাসানী পরিষদ পরিচালিত ‘ভাসানী গবেষণা প্রকল্প’ এর প্রধানের দায়িত্বভার গ্রহণ করায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত। দোয়া করি তার হাত ধরে ভাসানী পরিষদের গবেষণা প্রকল্প অনেক দূর এগিয়ে যাবে। ভাসানী গবেষণা প্রকল্পের প্রথম গ্রন্থ ‘চাষী-মজুরের মওলানা ভাসানী’ যেভাবে পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে, আশা করছি এই প্রকল্পের ২য় গ্রন্থ ‘ভাসানী অ্যালবাম’ ১ম খণ্ডটিও জনসমাদৃত হবে। বিশেষ করে আজকের তরুণ প্রজন্ম যখন ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহারে অভ্যস্ত। ছবি দেখে ও ঘটনা পঞ্জি পড়ে তারা মওলানা ভাসানীকে জানতে ও বুঝতে পারবে। শেকড়ের ইতিহাস পাঠে আকৃষ্ট হবে। পরিশেষে আমি স্নেহাশিস আজাদ খান ভাসানী ও তার প্রকাশিত ২য় বই ‘ভাসানী অ্যালবাম’ এর সফলতা কামনা করছি।