স্বেচ্ছাব্রতী জনযোদ্ধা লে: কর্নেল আবদুর রউফ, বীরবিক্রম, ছাত্রাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব ৬ দফা, ১১ দফা ও অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের জনসভায় স্বশরীরে উপস্থিতি তাঁর ধীমান উপলব্দিতে এক বৈপ্লবিক চেতনার উন্মেষ ঘটায়। শানিত হন স্বদেশ প্রেম ও স্বাধীনতার প্রগাঢ় চেতনায়। ঋদ্ধ হন মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্রে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি, এপ্রিলের মাঝামাঝি, কতিপয় সহযোদ্ধাসহ ভারতে পালিয়ে যান এবং ত্রিপুরায় অবস্থিত ২ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদান করেন। কিছুদিন অম্পিনগর মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১ম ওয়ার কোর্সে সেকেন্ড লেফট্যানেন্ট পদে কমিশন লাভ করেন এবং ৫ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন। সেক্টর কমান্ডার মেজর মীর শওকত আলী, বীরউত্তম, তাঁকে জনযোদ্ধা দ্বারা গঠিত একটি কোম্পানীর কমান্ডারের দায়িত্ব প্রদান করেন, যা পরবর্তীতে (পরিকল্পিত গেরিলা যুদ্ধের প্রয়োজনে) বাছাই করা জনযোদ্ধাদের নিয়ে পাইওনিয়ার কোম্পানীতে রূপান্তরিত করা হয়। তাঁর বলিষ্ট নেতৃত্বে পাইওনিয়ার কোম্পানীর অমিত তেজা মুক্তিপাগল জনযোদ্ধারা ৩টি সফল অভিযানে অংশ নেয় এবং বিজয় অর্জন করে। অধীনস্থ সহ-যোদ্ধাদের অমেয় ত্যাগ, বীরত্বগাথা এবং সংশ্লিষ্ট সকলের (গ্রামবাসী, গাইড, সংবাদ সংগ্রহকারী, সংগ্রাম কমিটি, নৌকার মাঝিগন এবং রসদ ও গোলাবারুদ বহনকারী) অবদান নিয়ে লেখার দায়বোধ থেকেই এ রচনা। নিরলস পরিশ্রম, অপরিসীম নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দীর্ঘ পরিক্রমনের মাধ্যমে (১৫ বয়সের অধিক সময়) তিনি বস্তুনিষ্ঠ, সত্য ও নির্ভূল তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করেন এবং নির্মোহভাবে ৩টি যুদ্ধের কাহিনী লিপিবদ্ধ করেন। এক অতলস্পর্শী সহ-মর্মিতায় তুলে ধরেছেন তাঁর অধীনস্থ জনযোদ্ধা ও সংশ্লিষ্ট সকলের আত্মত্যাগ ও অবদানের গৌরবোজ্জল আলোচিত অধ্যায়, দৃপ্ত কাহিনী। এই বইটি পাইওনিয়ার কোম্পানীর জনযোদ্ধা ও সংশ্লিষ্ট সকলের অমেয় ত্যাগে সৃষ্ট ইতিবৃত্তের রূপরেখা, যাতে জনযুদ্ধ বা গেরিলা যুদ্ধের সকল বৈশিষ্ট্য ও উপাদান বিদ্যমান। মুক্তিযুদ্ধে জনযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ ও অসাধারন সাফল্যের কথা এই বই। প্রকৃত অর্থে এটি মুক্তিযুদ্ধের একটি জীবন্ত চিত্র। এতে অসম্পূর্নতা থাকতে পারে, কিন্তু অপলাপ নেই।
লে. কর্নেল আবদুর রউফ, বীর বিক্রম (অব.) জন্ম: ১ আগষ্ট ১৯৪৯ সাল। গ্রাম: কোচেরচর, থানা- মনোহরদী, জিলা- নরসিংদী। বর্তমান নিবাস: বাড়ী-৩৫, সড়ক-০২, সেক্টর-১৩, উত্তরা, ঢাকা। পিতা: মরহুম আবদুল হেকিম। মাতা: মরহুমা রওশন আরা বেগম। স্ত্রী: শামীম আরা রউফ। পুত্র: আশরাফুল আলম। কন্যাত্রয়: ডা: রাবেয়া খানম, ইসমত আরা তানজীন রউফ ও রাতিন আরা রউফ। শিক্ষা: হাতিরদিয়া ছাদত আলী মডেল হাইস্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষাগত যোগ্যতা: অর্থনীতিতে এম.এ এবং ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড ও স্টাফ কলেজের গ্র্যাজুয়েট। পেশা: শিক্ষকতায় আগ্রহ থাকলেও মুক্তিযুদ্ধ জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের কারণে সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ। যুদ্ধ শেষে, ৫ নম্বর সেক্টর থেকে, ১৬ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদান। ১৯৮৩ সালে অকালীন অবসর প্রদান। অত:পর সরকারী চাকুরীর প্রস্তাব প্রত্যাখান ও নিজস্ব ব্যবসায় আত্মনিযোগ। একজন সফল ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখালেখি ও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যানেরত। রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন (রাওয়া), আর্মি গলফ ক্লাব এবং বাংলাদেশ ওয়ার কোর্স ফাউন্ডেশনের আজীবন সদস্য।