ক্ষুধা বা দারিদ্র্য কোনোটাই মানুষের স্বাভাবিক অবস্থান নয়। এগুলো মানুষের ভুল চিন্তার মাশুল। মানুষের ভুল চিন্তা-প্রসূত তত্ত্বের কারণে এর সৃষ্টি হয়েছে। ভুল তত্ত্ব, ভুল অর্থনৈতিক কাঠামো সৃষ্টি করেছে। যার ফলে ভুল সামাজিক কাঠামো তৈরি হয়েছে। জনাব আবদুল হাই খান গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প থেকে একজন অত্যন্ত মেধাবী ও ক্ষকর্মী হিসেবে আমার সাথে কাজ করে আসছে। গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন স্তর ক্রমান্বয়ে পার করে বর্তমানে গ্রামীণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে শে-বিদেশে গ্রামীণ ক্ষুুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যাবসা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দীর্ঘ ৪০ বছরব্যাপী গ্রামীণের কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে সে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছে। সামাজিক ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক-এ কাজের সুবাে সামাজিক ব্যাবসা সম্পর্কে তাঁর ধারণা গভীর হয়েছে। আমার লেখা বই ‘A World of Three Zeros’-এ উদ্বুদ্ধ হয়ে শূন্য বেকারত্ব বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গ্রামীণ ট্রাস্ট ‘Venture capital fund’ গঠন করে বাংলাদেশে নবীন পুঁজি বিনিয়োগ কর্মসূচি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। বাংলাদেশে নবীন কর্মসূচির সফলতা দেখে গ্রামীণ কসোভো ও গ্রামীণ ইয়েমেন সামাজিক ব্যাবসা হিসেবে নবীন কর্মসূচি রেপ্লিকেশন করে চলেছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তাঁর যে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে তারই আলোকে লেখা ‘বেকারত্ব থেকে উদ্যোক্তা’। যাঁরা দারিদ্র্যমোচন ও বেকার মুক্ত পৃথিবী, শে কিংবা গ্রাম গড়ার স্বপ্ন দেখেন, তাঁরা আবদুল হাই খানের অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রেরণা পাবেন নিঃসন্দেহে। আশা করি, বইটি সকলের কাছে আদৃত হবে। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক-এর প্রতিষ্ঠাতা ও ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী
আবদুল হাই খান নরসিংদী জেলার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে পয়লা জুন ১৯৫৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৭৬ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। চাকরিজীবনে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক প্রফেশনাল প্রশিক্ষণ নেওয়ার পাশাপাশি ২০০৮ সালে আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে Financial Institution Private Enterprise Develop- ment Executive Education Program- এর উপর বিশেষ ডিগ্রি লাভ করেন। নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস-এর সান্নিধ্যে ও সরাসরি তত্ত্বাবধানে ১৯৮১ সাল থেকে প্রথমে গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক; পরবর্তীতে প্রোগ্রাম অফিসার, এরিয়া ম্যানেজার, জোনাল ম্যানেজার এবং প্রশিক্ষণ ও বিশেষ কর্মসূচির বিভাগ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করার পর তিনি ২০০৫ সালের অক্টোবর মাসে উপমহাব্যবস্থাপক পদে অবসর গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি ২০০৫ সালের ২৭শে অক্টোবর গ্রামীণ ট্রাস্টের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদান করেন। জানুয়ারি ২০১৭ থেকে ডিসেম্বর ২০২২ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়ে তিনি দেশ-বিদেশে গ্রামীণ ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। বর্তমানে তিনি গ্রামীণ ট্রাস্টের ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। আবদুল হাই খান ২০০৩-২০০৫ সময়ে কসোভোতে Kosovo Grameen প্রকল্পের পরিচালক এবং বাহরাইনে ২০১০-২০১২ সময়ে Family Bank- এর মহাব্যস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন গ্রামীণ ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বোর্ডের চেয়ারপারসন/ সদস্য হিসেবে সেবা প্রদান করেছেন। গ্রামীণে চাকরির সুবাদে তিনি বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২৩টি দেশের ১ হাজার ৫৬০টির অধিক বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জ, প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির উপর বহু স্মৃতিময় অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তারই আলোকে লেখা 'বেকারত্ব থেকে উদ্যোক্তা'। তাঁর প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে এটি সর্বশেষ প্রকাশনা।