তরুণ কবি রাকিবুল এহছান মিনারের লেখা ‘প্রিয়তমা— তোমাকে যেভাবে চাই’ এ বইটির পাণ্ডুলিপিটি পড়ে তার পুরো চিন্তাধারাটিকেই আমার কাছে একটি ব্যতিক্রমী প্রয়াস বলে মনে হলো। ব্যতিক্রমী বলছি এ জন্য যে, প্রাসঙ্গিক বিষয়ে সব কবিদেরই শুধু না, সব মানুষেরই মনোজগতে এক ধরনের রোমান্টিক ভাবনা জাগ্রত থাকে। তবে এত বিস্তারিত পরিধি নিয়ে নানা আঙ্গিকে রোমান্টিকতার এমন বহুমাত্রিক ভাবনার বিন্যাস কবি মানসের এমন বৈচিত্রময় প্রকাশ আমি ইতোপূর্বে আর লক্ষ্য করিনি। দেখিনি সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে একটি পূর্ণমাত্রার কাব্যগ্রন্থ সাজিয়ে ফেলতে। প্রতিটি কবিতাতেই পাওয়া যাবে ভিন্ন আঙ্গিক ও ভিন্ন স্বাদের রোমান্টিকতা। পরতে পরতে খুঁজে পাওয়া যাবে বাস্তবতার সূক্ষ্ম বুনন। বয়সে তরুণ ও অবিবাহিত হলেও কবি এ বইয়ে যেসব বিষয়গুলো উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছে, তার প্রায় প্রতিটি বিষয়ই বাস্তবিক জীবনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একজন ধার্মীক নববধূ থেকে এমন কামনা বা প্রত্যাশা প্রতিজন ধার্মীক পুরুষেরই থাকে। সে দিক থেকে এ বইটি হতে পারে সেসব পুরুষ ও নারীদের জন্য প্রস্তুতকৃত মলাটবদ্ধ অন্যতম সেরা উপহার। বইটিতে কিছু রোমান্টিক কবিতার পাশাপাশি বেশিরভাগই বিষয়ভিত্তিক কবিতা লক্ষ্য করা গেছে। যেমন- নামাজ, পর্দা, উত্তম চরিত্র, কথা, বিশ্বাস, সম্মান, সমঝোতা, বিয়ে, সন্তান ও নফসের জিহাদের মতো প্রাত্যহিক জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আন্তরিকতার সাথেই উঠিয়ে আনার চেষ্টা করেছে কবি। অবাক করার মতো বিষয় হলো, এমন একটি রোমান্টিক কবিতার বইতেও কবি প্রিয়তমার জন্য তানযীম তারবিয়াত ও কবির কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন শাহাদাতের মতো স্পর্শকাতর ও কঠিন বাস্তবিক বিষয়েও কবিতা লিখে দিতে কুণ্ঠিতবোধ করেনি। এমন সাহসী উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে বলেই আমি মনে করি। আমার বিশ্বাস, শুধু তরুণরাই এ বইটি লুফে নেবে, এমন নয়; বরং বয়স্করাও বইটি পড়ে মুগ্ধ হবেন ও স্মৃতিকাতর হবেন। আমি কবির জন্য দোয়া করছি, যেন খুব শীঘ্রই তার প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হয় এবং আল্লাহ্ পাকের রহমতে কবি তার কাঙ্ক্ষিত জীবনসঙ্গীনি (লাইফ পার্টনার) পেয়ে যায়। যাতে কবির এই নিঃসঙ্গ জীবনের ‘প্রিয়তমা—তোমাকে যেভাবে চাই’ এই ভাবনার পরিসমাপ্তি ঘটে। আমি বইটির ব্যাপক সফলতা কামনা করছি। ওস্তাদ তোফাজ্জল হোসাইন খান সভাপতি— বাংলাদেশ সংগীত কেন্দ্র, সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট— ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ::: ‘প্রিয়তমা তোমাকে যেভাবে চাই’ কাব্যগ্রন্থ থেকে একটি কবিতা- ‘ ঘুমের পরী’ . প্রিয়তমা, একটি গল্প শোনো ঘুমের পরির আমার পাশেই এসে ঘুমায় সে রোজ, বিমুগ্ধ চেয়ে থাকি নির্ঘুম চোখে ঘুমের ঘোরেই করে আমাকে সে খোঁজ! রাতজাগা পাখি হয়ে দেখে রই চাঁদ আরে নাহ্ চাঁদ নয় এ তো তার মুখ, হুর নয় নূর নয় তবু এত আলো ভরে দেয় হৃদয়ে সে পৃথিবীর সুখ। ঘুমন্ত মুখে তার এত মায়া প্রেম মন চায় সারারাত শুধু চেয়ে রই, জেগে উঠে মেলে দিলে পাপড়ির দোর দুটো চোখ যেন তার নয়া ছাপা বই। সেই বই লেখা কোন বর্ণমালায় জানি না তা আমি তবু পড়ি অপলক, আমৃত্যু সেই বই একা পড়ে যেতে অধিকার শুধু এই পাঠকের হোক। হয়তো বা বই নয় তাকে পড়ে ফেলি হয়তো বা পড়ি না তো দেখি তার রূপ, হয়তো বা রূপ নয় অপরূপ কিছু আমি শুধু চেয়ে রই হয়ে নিশ্চুপ। আমার ভাষায় তাকে অনুবাদ করি আমার মনের মতো লিখে দিই সব, হৃদয় টেবিলে তার একক দখল মনের শহরে তাকে করি অনুভব। গোলাপের পাপড়ির মতো দুটো ঠোঁট কোমলতা ভরা তার প্রতিটি পরশ, মাদকতা অনুভব করি তার ঘ্রাণে স্পর্শেই হয়ে যায় হৃদয় হরষ। তুমি কেন হেসে হেসে হয়ে গেলে লাল আমি তো এখনো তার বলিনি যে নাম, যদিও তুমিও দেখো আয়নায় তাকে তার মাঝে নিজেকেই আমি হারালাম। কবুল বলেই তার পেয়েছি হৃদয় জীবনের চেয়েও যে অমূল্য দাম, সেই পরী চাঁদ শুধু তুমি প্রিয়তমা ভালোবাসা ছিল আছে রবে অবিরাম।
রাকিবুল এহছান মিনার . বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অন্যতম সমৃদ্ধ জেলা ফেনী। কবি নবীনচন্দ্র সেনের জেলা হিসেবে পরিচিত এ জেলায় জন্মগ্রহণ করেছেন শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ্ কায়সার, সিরাজুল হক খান, সেলিনা পারভিন, জহির রায়হান ও নাট্যকার সেলিম আল দীন-সহ অনেক দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব। . সাহিত্য সংস্কৃতির এই উর্বর ভূমিতেই গত শতাব্দীর বিদায়ের ক্ষণে এসে জন্ম হয় বর্তমান সময়ের উদীয়মান তরুণ কবি ও গীতিকার রাকিবুল এহছান মিনারের। আর পাঁচজন সাধারণ ছেলের মতোই আবাহমান গ্রাম বাংলায় জন্মগ্রহণ করা ও বেড়ে ওঠা এ ছেলেটির মা-বাবাও হয়তো ভাবতে পারেননি, তারা কেমন একজন আলোকিত মানুষের জন্ম দিয়েছেন ও বেড়ে তুলেছেন। তারা কি জানতেন? একদিন তাদের জন্ম দেওয়া সেই ছোট্ট শিশুটি বড়ো হয়ে তার কাব্য প্রতিভায় আলোকিত করবে দেশ ও জাতি। তার লেখনীতে আলোর পথ খুঁজে পাবে পথহারা মানুষেরা। নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখতে পাবে দুঃস্থ অসহায় ও মাজলুম মানুষেরা। . অতি যতনে বাবা-মা যার নাম রেখেছিলেন রাকিবুল এহছান মিনার। আজ যেন সেই নামেরই প্রতিফলন তার ব্যক্তিচরিত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে। মহান আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম ‘ইয়া রাকিবু’ থেকে নেওয়া রাকিব নামটি। দেশব্যাপী মানবতার কল্যাণে কাজ করা ‘পথের ফুল ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা এ কবি নিয়মিত সামাজিক ও মানবিক কাজের মাধ্যমে নিজের এহছান নামের প্রতি যেমন সুবিচার করে যাচ্ছেন, তেমনই বর্তমান বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে সে সাহিত্যের উচ্চ মিনারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তার লেখনীর মাধ্যমে। . অপসংস্কৃতি ও পশ্চিমা শিক্ষাব্যবস্থার প্রভাবে আমাদের দেশের ছাত্র যুবসমাজ যখন অশ্লীলতা বেহায়াপনা ও মাদকতার দিকে ক্রমবর্ধমানহারে ঝুঁকে যাচ্ছে, তখন কবি রাকিবুল এহছান মিনার নিয়মিত তার গান কবিতার মাধ্যমে তাদের আলোর পথে আহ্বান করে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র নিজের কাব্য রচনায় সীমাবদ্ধ না থেকে লেখালিখিতে আগ্রহী তরুণদেরকে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় কাব্য রচনায় নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। . ব্যক্তি জীবনে তিনি একজন প্রবাসী। নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর শুধু কলমের মাঝেই নয়, নিজের কর্মক্ষেত্রেও রেখেছেন। বর্তমানে তিনি সৌদি আরবের একটি স্বনামধন্য কোম্পানীতে ‘পরিমাণ পরিমাপক’ পেশায় সুনামের সহিত নিয়জিত আছেন। . সাহিত্যকর্মে নিয়মিত অবদান রেখে যাওয়া এই তরুণ কবির ইতোমধ্যে চারটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। কাব্যগ্রন্থগুলো হলো— নিজকে গড়ো, চেহারায় মানুষ, ছন্দে গাঁথা বারুদ ও হৃদয়ের অগ্ন্যুৎপাত। বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিতায় কবির এবারের আয়োজন তার পঞ্চম কাব্যগ্রন্থ আসছে ‘প্রিয়তমা—তোমাকে যেভাবে চাই’। . আশা করছি, কবি রাকিবুল এহছান মিনারের প্রকাশিতব্য কাব্যগ্রন্থ ‘প্রিয়তমা—তোমাকে যেভাবে চাই’ বইটি পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলবে এবং বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য প্রকাশনা হিসেবে কাল জয় করবে, ইনশাআল্লাহ।