নতুন কিছু জানার কৌতূহল মানুষের আজন্ম । একই সঙ্গে ইতিহাসের অজানা কথা জানার আগ্রহও কম নয় ৷ জাদুঘর আমাদের মানবসভ্যতার সেই সত্য ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি ফেরায় । এমন সব প্রশ্নের জবাব দেয় জাদুঘর যা বিদ্যায়তন থেকে আমরা সহজে জানতে পারি না । গোটা বিশ্ব জাদুঘরের অভ্যন্তরেই জমিয়ে রাখে তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, আত্মপরিচয় । শিশুর জীবনে বড় হওয়ার নতুন স্বপ্ন তৈরি হতে পারে জাদুঘরে । মানুষের অতীত ও সাম্প্রতিক শিল্প-সংস্কৃতির ইতিহাস নিয়ে জাদুঘরবিষয়ক এই বই নিঃসন্দেহে পাঠকের জন্য জ্ঞানের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে । জাদুঘর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আর্টিস্ট ও ডিজাইনার মাইরা কালমান বলেছেন, ‘একটি জাদুঘর দেখা মানে জীবনের সত্য, সুন্দর ও অর্থের অনুসন্ধান করা । অতএব জাদুঘর দেখো, যতবার সম্ভব ।' আবার ফিলিপাইনের জাতীয়তাবাদী নেতা হোসে রিজাল বলেন, ‘যে মানুষটা জানে না তার পুরাতন ইতিহাস, জানে না সে কোথা থেকে এসেছে, সে জানে না ভবিষ্যতে তার গন্তব্য কোথায় ৷’ জায়েদ ফরিদ সম্পাদিত এই বইটি জাদুঘর সম্পর্কে পাঠকের কৌতূহল বাড়াবে এবং ইতিহাস, শিল্প, সংস্কৃতির নানান জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে সহায়ক হবে বলে আমাদের বিশ্বাস ।
জন্ম ১৯৪৮ সালে। শৈশব-কৈশোর কেটেছে এক বিমিশ্র প্রাকৃতিক ঠিকানায় যার সামনে পদ্মা, পেছনে যমুনা, মাঝখানে কাশবন, বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত এবং বন-জঙ্গল। গাঙ্গেয় শুশুকের সঙ্গে সাঁতার কেটে আর বন-বাদাড়ে ঘুরে বেড়িয়ে বড় হয়েছেন তিনি। শৈশবের দুরন্ত জায়েদের প্রথমপাঠ পাবনায় শুরু হলেও পরবর্তীকালে পিতার চাকরিসূত্রে আরণ্যক যশোরে অবস্থান করেছেন প্রায় একযুগ। অতি-কৈশোরেও তৎকালীন যশোরের উদ্ভিদজগৎ, সাধুসন্তদের চিন্তাধারা ও লালনগীতি তাঁর জীবনবোধকে স্পর্শ করে। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে অধ্যয়ন করেছেন তিনি। পেশাগত জীবনে মধ্যপ্রাচ্যে রিয়াদের বিজ্ঞান জাদুঘরে প্রকৌশল ও টেকনিক্যাল কিউরেটর হিসেবে কাজ করেছেন প্রায় দু-দশককাল। বিদেশের মাটিতে থেকেও তিনি দেশের প্রকৃতিকে গভীরভাবে অন্তরে ধারণ করে আছেন। ছুটিতে দেশে এসেই নিসর্গীদের নিয়ে অক্লান্তভাবে ঘুরে বেড়ান বৃক্ষজগতের অলিগলিতে। বিদেশের খণ্ড-অবসরে তিনি রাইটার্স নামে একটি সাহিত্যপত্রিকা সম্পাদনা করেছেন কয়েক বছর, বিজ্ঞান চর্চা করেছেন, গল্প-কবিতা লিখেছেন। প্রচারবিমুখ, বন্ধুবৎসল এই মানুষটির অনেক অদ্ভুত স্বভাব সম্পর্কে জানা যায়। দীর্ঘ যানজটেও কখনো ক্লান্ত হন না, চোখ তখন নিবিষ্ট থাকে রাস্তার পাশে বা সড়কদ্বীপের গাছগুলোর দিকে। প্রকাশনার পর কখনো নিজের বইয়ের খবর রাখেন না, মনে করেন পুস্তকের যাবতীয় অধিকার পাঠকের। খেয়ালি এই নিসর্গীর আরেকটি স্বভাব হলো উদ্ভিদসংক্রান্ত বিচিত্র তথ্য-সংগ্রহ করে তা অন্যদের অবহিত করা। জীবন, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও উদ্ভিদের মেলবন্ধনে জায়েদ ফরিদের অবদান অনস্বীকার্য। এই সদালাপী, নিরহংকার মানুষটির পথচলা সরল ও নিরবচ্ছিন্ন হোক, আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।