জন্ম গ্রাম বাংলায়, বাঁকুড়ার গ্রাম। উত্তরাধিকার সূত্রেই প্রাপ্ত সাংস্কৃতিক পরিবার-পরিমণ্ডল। দুই অগ্রজের হাত ধরে গড়ে ওঠা, বেড়ে ওঠা। পিতার লালন ও সমর্থন। আর চারপাশে মাটির গন্ধ মাখা-মানুষ, কৃষক, চাষীবাসী, ক্ষেতমজুর- যাদের আনাগোনা এই পরিবারে আত্মীয়-স্বজনের মতন। এই সাহিত্য-সংস্কৃতির কর্ষণ-ভূমিতে তারাই বুঝি বুনেছিলো নাটকের চরিত্র-নির্মাণের বীজ। তা না হলে এমন ভুরভুরে মাটির গন্ধে ভরপুর কোনো না কোনো চরিত্র তাঁর প্রায় সব নাটকে আসে কী করে? সুপ্রীতির পড়াশুনোর বিষয় অর্থনীতি। তাঁর নিজের কথায়, অর্থশাস্ত্রটা না পড়লে যে সব নাটক লেখা গেছে সেগুলো লেখা হয়ে উঠত না। অর্থনীতির ছাত্র বলেই বুঝি, তাঁর নাটকে আর্থ- সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়গুলো এমন ক্ষুরধার বিশ্লেষণে এত সহজেই ধরা দেয় তাঁর হাতে। কর্মসূত্রে সুপ্রীতির নগর কলকাতায় আসা। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যসরকারের সচিবালয় তাঁর কর্মস্থল। গ্রামকে না চিনলে যেমন ভারতবর্ষকে চেনা হয় না, তেমনি ভারতবর্ষের নগরকে না জানলে আধুনিক বিধিব্যবস্থা বা আধুনিক সভ্যতার জটিলতাগুলোকে বোঝা যায় না। তাই এই গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরিত হয়ে আসাটাও তাঁর কাছে এক অন্য-পৃথিবীর উন্মোচন। বোঝা যায়, সুপ্রীতি এই চলার পথে কিছুই দলে মাড়িয়ে যায়নি। পথের কাঁকরকেও মনিমুক্তোর মতো তুলে রেখেছে। তা না হলে আধুনিক বিধি- ব্যবস্থার এমন মারমুখী জটিলতাগুলোর সঙ্গে গ্রামীণ সভ্যতার বিপন্নতা, তার উৎখাতী-উদ্বাস্তুরা এমন মিলেমিশে একাকার হয়ে তাঁর নাট্য-সৃষ্টিতে আধারিত হয় কী করে? কলকাতায় আসা সুপ্রীতির কাছে আর একটা সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়। উদ্দেশ্য ছিল সঠিক পদ্ধতিতে নাট্য দীক্ষায় দীক্ষিত হওয়া। কিন্তু কার কাছে? কোথায়? সে-কোন্ কৈশোর থেকে বেতারে শুনে এসেছে রোমাঞ্চ-জাগানো স্বর- তরঙ্গ! তাঁকে যদি পাওয়া যায় দীক্ষাগুরু! শ্রী শম্ভু মিত্র! নাট্যাচার্য! জানা গেল শাঁওলী মিত্র প্রতিষ্ঠিত ‘পঞ্চমবেদ চর্যাশ্রমে’ তিনি মাঝে মাঝে পাঠ দান করেন। সুযোগ মিললো । শম্ভু মিত্র মশায়-এর জীবনের শেষ