কবিতার পথে বহুদুর যাইবেন................. কবিতা ভালোলাগার এক শিল্প সম্ভার। আমি ছড়া, প্রবন্ধ যেরকম পড়ি তেমনি পড়ি কবিতার বই। বিদেশ থাকায় সেই পাঠে খানিক ছেদ পড়ছে। তারপরও প্রযুক্তির প্রযত্নে অনলাইনে টুকটাক পড়া হয়। এই মুহূর্তে আমরা সামনে আছে তরুণ কবি মাহমুদ আল ফাহাদ এর কাব্যগ্রন্থ ‘সোনালু প্রেম শালুক সংসার’ এর পাণ্ডুলিপি। কবি মাহমুদ আল ফাহাদ এর এই বই একুশে বইমেলায় প্রকাশ হইতে যাইতেছে। ফাহাদ তরুণ হইলেও দীর্ঘদিন ধইরা দেশের মূলধারার কাগজে নানা প্রকরণে লেইখা আসতেছে। এরমধ্যে ছড়া ও কবিতাই বেশি। দীর্ঘদিন ধইরা লিখলেও সম্ভবত এইটা তার প্রথম কবিতার বই। বইয়ে মোট ৫২টা কবিতা ঠাঁই পাইছে। বইয়ের বেশকিছু কবিতা পড়া হইছে আমার। তার কবিতায় ভাষার প্রয়োগ-পদ্ধতিতে ভাব ও আবেগের মিশেলে ভাবাবেগ যথেষ্ট সুন্দরভাবে উপস্থাপিত। এরমধ্যে কয়েকটা কবিতা খুব ভাল্লাগছে। কিছু কবিতায় ছড়ার সুবাস পাবেন পাঠক। তারুণ্যে লেখা বইলাই হয় তো কিছু কবিতায় চাঞ্চল্য আছে। পাঠক কবি মাহমুদ আল ফাহাদ এর কবিতার শৈল্পিক আনন্দ ও রস দুইটাই উপভোগ করবেন। বইয়ের একটা কবিতার কয়েক লাইন পড়তে পারি। ‘মেয়ে! তুমি যখন আমার হৃদয়ের প্রধান ধমনির সমান চিকন আইল ধরে/ ইশকুলে যেতে, তখন থেকে আমি প্রেমিক। তুমি চিকন আইলে ঠিকঠাক/ হাঁটতে পারতে না, যতবার পড়ার মতো করে পাক খেতে, ততবার আমার/মন মুচড়ে যেত!/ তারপর থেকে বহুবার মুচড়েছে অন্তর, কবি হয়েছি আমি।/’ (কবি হয়েছি) এই কবিতায় একজন কিশোর কিম্বা তরুণের কবি হইয়া উঠার শাশ্বত গল্পই যেন নুতুনভাবে উচ্চারিত হইছে। আমার ধারণা শব্দ ও ছন্দের যথার্থ সমন্বয়ে কবি মাহমুদ আল ফাহাদ কবিতার পথে বহুদুর যাইবেন। আমি কবি মাহমুদ আল ফাহাদ ও তার কবিতার বই ‘সোনালু প্রেম শালুক সংসার’ এর সাফল্য কামনা করি। -জগলুল হায়দার নিউজার্সি, যুক্তরাষ্ট্র ০৩.০২.২০২৩ বাজপাখি বালকের সোনালু প্রেম................. আমার ধারণা ছিল এই কবি (মাহমুদ আল ফাহাদ)-কে আমি তার কিশোর বয়স থেকই চিনি, এবং ধারণা এও ছিল যে ধীরে ধীরে উনাকে ডানামেলা পাখি, সে বাজই হোক বা টাকুর-টুকুর চাওয়া শালিক পাখিই হোক, হিসেবে গড়ে উঠতে আমি দেখেছি। তবে, আমার ধারণায় ভুল ছিল মনে হচ্ছে। কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের পাÐুলিপি হাতে পেয়ে মনে হয়েছে ডানা তার আগেও ছিল, তখন লুকিয়ে রেখেছিলেন, শুধু মেলে ধরার জন্য খুঁজছিলেন মোক্ষম সময়! আমি আনন্দিত তিনি বিশাল আকাশের গায়ে বাজপাখি বালকই হয়েছেন। তার কবিতায় আমি যেমন পেয়েছি গ্রামের পুকুর পাড়ের কুলকুচি থেকে শহরের ব্যস্ত মাতাল দিন। পেয়েছি মুঘল সম্রাট শাহাজাহান থেকে শেক্সপিয়রের রোমিওকে, এমনকি দূর আরবের বেদুইনকেও! জয়নুল, ভিঞ্চি, কাকে নয়? তার এই বিশাল ক্যানভাসের ভিন্নতার তালিকা শেষ করা কষ্টকর। সঙ্গে আবার কবি সাহেবের হুমকি- আমার হাতে সময় কম, আপনার লেখার জায়গা কম। তাই আপাতত এই আশায় শেষ করছি যে কবিতা যেমন তেমন হোক, এই কবির তীক্ষè পর্যবেক্ষণ যেন সুউচ্চ আসমান থেকেও আশে-পাশে-ওপরে-নিচে সবখানেই বরাবরের মতোই থাকে। জয় গুরু আলেক সাঁই। -অনিক খান, সাবেক ছড়াকার মুগ্ধ করা বাক্য আর ভাবনা ভরা তার পুরো কবিতার বই তার সাথে পরিচয়ের গল্পটা পুরান। সে ভাইব্রাদার, সংগঠক, লেখালেখি-পত্রিকা করা ছেলে এবং ব্যবসায়ী। ফাহাদের এসব পরিচয়ই আমার সামনে ছিলো, তার কবিতার সাথে পরিচয় ছিলো কম। কদিন আগে একটা পাণ্ডুলিপি দিয়ে জানায়, এ বছর তার কবিতার বই প্রকাশ পাচ্ছে। কবিতা আমি কতটা বুঝি সেটা আমি জানি না, কিন্তু কবিতার ভেতরে কবিতা আছে কিনা সেটা ধরতে পারি। মন থেকে আসা কবিতা এবং জোর করে লেখা কবিতার পার্থক্য করতে পারি। দীর্ঘ কবিতার মধ্যে হয়তো পুরোটাই কবিতা হয় না, কবিতা হয় একটা লাইনই। কিংবা কবিতা হয় ভাবনাটা। ফাহাদের কবিতারগুলোর মধ্যে সেরকম অসংখ্য কবিতা আছে। যা তার কবিসত্ত¡ার জানান দেয়। যেমন ফাহাদ তার এক কবিতায় বলছে, ‘এ দিল শাহজাহানের হলে তাজমহল এতো ছোট হতো না’। দারুণ ভাবনা মনে হয়েছে সেটা। এই একটা লাইনই কবিতা হয়ে গেছে। কিংবা সে তার প্রেমিকাকে বলছে, ‘কবির প্রেমিকা হওয়ার আনন্দ কী জানো? প্রেম শিখতে শিখতে বরণীয় মৃত্যু হবে তোমার’। এটাও সুন্দর। কবিদের যে অমরত্ব, সেই অমরত্বের ভাগ তারা তার প্রেমিকাকেও দিতে চায়। কবিদের প্রেমের গভীরতা এতোটাই। এমন অসংখ্য মুগ্ধ করা বাক্য আর ভাবনা ভরা তার পুরো কবিতার বই। সবচেয়ে মুগ্ধ করা কবিতা মনে হয়েছে, শালুক সংসার। যার নামে বইটির নামকরণ হয়েছে। ‘তারপর কানামাছির অন্ধকার সেচে, বউচির সংকল্প যেচে আর গোল্লাছুটের গতিকে তোমার স্পীডোমিটারে মেপে কবুল বলেছি প্রেমে, পেতেছি শালুক সংসার’। প্রেমের মতো কবিতায়ও ফাহাদের পাতা শালুক সংসার দীর্ঘ হোক। তার জন্য শুভকামনা... -ইশতিয়াক আহমেদ
মো. মাহমুদ আল ফাহাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তার বারো বছরেরও বেশি ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতাসহ একটি দারুণ পোর্টফোলিও রয়েছে। নিয়মিত লেখালেখির প্রায় ষোলো বছর পার করলেও এটিই তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। তিনি আনন্দ আলো, বৈচিত্র-সহ কয়েকটি পত্রিকায় কাজ করে সর্বশেষ ব্যবসা শুরুর আগে ফিচার লেখক হিসেবে কাজ করেছেন বিখ্যাত দৈনিক ‘প্রথম আলো’-তে। ছোটবেলা থেকেই শখেরবশে লেখালেখি করতেন। এখনও সময় পেলেই লেখালেখি করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় দুই বন্ধুর সাথে তিনি তার ব্যবসায়ীক জীবন শুরু করেন। একজন তরুণ উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা রেখে ২০১৪ সালে তিনি জুবিয়ন লিমিটেড কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। পাশাপাশি সহ-উদ্যোক্তা ও অর্থ পরিচালক হিসেবে, তিনি ঢাকা জেলার অন্যতম হাউজিং প্রকল্প ‘আকসির নগর’-এও কাজ করে আসছেন। আকসির নগরে তার সাফল্যের সাথে সাথে আবাসন ব্যবসার বৃহত্তর খাতকে মাথায় রেখে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘জুবিয়ন ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস্ লিমিটেড’ (জেডডিএসএল) নামে আরেকটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে কর্মরত আছেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (ঐঊঅঅ) যুগ্ম আহাবায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। সোনালু প্রেম শালুক সংসারের কবি মাহমুদ আল ফাহাদের জন্ম ১৯৯১ সালের ২৯ শে ডিসেম্বর কুমিল্লায়।