লেখকের কথা স্বাধীনতার সংগ্রাম হচ্ছে একটা জাতি-রাষ্ট্রের বুনিয়াদ। স্বাধীনতার সংগ্রামের ইতিহাস হচ্ছে একটা রাষ্ট্রের শেকড়ের ইতিহাস। রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের সেই ইতিহাস সম্পর্কে অবশ্যই সচ্ছ ধারণা থাকা উচিত। যে নাগরিক তার রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনের ইতিহাস জানবে, রাষ্ট্রের প্রতি সে অন্য মানুষের চেয়ে বেশি দায়বদ্ধতা অনুভব করবে। এমন নাগরিকের কাছে তার দেশ হবে মাতৃবৎ। কী অপরিসীম ত্যাগের মূল্যে মা একটি সন্তানকে পৃথিবীতে আনে! লালনপালন করে; এই বাস্তবতা যে সন্তান হৃদয়ঙ্গম করতে পারে মায়ের প্রতি সেই সন্তান অনুভব করে প্রগাঢ় মমত্ববোধ। দেশও ঠিক তেমনি। মা যেমন তাঁর সর্বস্ব উজাড় করে সন্তানকে ধরিত্রীর জন্য উপযোগী করে তোলে, দেশও তার জল-হাওয়ায় আমৃত্যু লালন করে একজন মানুষকে। সুতরাং সুসন্তানের মতো দেশের সুনাগরিক গড়ে তোলার পূর্বশর্তও হচ্ছে দেশের প্রতি নাগরিকের মমত্ববোধ জাগিয়ে তোলা। আর দেশের প্রতি মমত্ববোধ জাগে তখনই, যখন একজন মানুষের মধ্যে দেশের জন্মের ইতিহাসজ্ঞান থাকে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, কোনো এক অজ্ঞাত কারণে স্বাধীনতার অর্ধশত বৎসর পরেও বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের পাঠ সহজসাধ্য নয়। মৌলবাদ, পক্ষপাতদুষ্ট রাজনীতি বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস পাঠের পথ অপ্রসন্নতার অন্যতম কারণ। কৈশোরকাল থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের ইতিহাস আমার প্রবল আগ্রহের জায়গা। এই আগ্রহ চরিতার্থ করতে গিয়ে আমি হেঁটেছি বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের অলিগলিতে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রতি এই কৌতূহল আমার ভেতর দেশের প্রতি তৈরি করেছে প্রগাঢ় মমত্ববোধ। অথচ দৈনিন্দন জীবনের নানান বাঁকে আমাদের প্রজন্মের বহু মানুষকে দেখেছি দেশের প্রতি, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি কেবল উদাসীনই নয়, বরং সুযোগ পেলেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। বিষয়টি নিয়ে আমি হামেশাই মনোবেদনা অনুভব করি। আমার সেই সীমাহীন মনোবেদনাই আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে গ্রন্থ রচনায়। মানুষের মন, মনন ও মস্তিষ্কের সবচেয়ে উর্বর সময় হচ্ছে কিশোরকাল। যদি এই সময়টায় একজন কিশোরের মস্তিষ্কে দেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের প্রাথমিক পাঠ রোপণ করে দেয়া যায়, সেই কিশোরের বড়বেলাতেও আর পথ হারানোর আশংকা থাকে না। এই অভিপ্রায় থেকে আমি এবার রচনা করেছি মুক্তিযুদ্ধের কিশোর উপন্যাস ‘আলোয় রাঙা ভোর’। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পটভূমিতে শুরু ‘আলোয় রাঙা ভোর’র। কুড়িগ্রামের চিলমারী গ্রামের স্কুলপড়ুয়া চার কিশোরের ধীরে ধীরে মুক্তিসংগ্রামে জড়িয়ে পড়ার কাহিনি কিশোর পাঠোপযোগী করে মলাটবদ্ধ করা হয়েছে আলোয় রাঙা ভোর উপন্যাসে। আমার সুদৃঢ় বিশ্বাস এই উপন্যাসের গল্প কিশোরমনে আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রতি প্রবল আগ্রহের জন্ম দিবে এবং সুখপাঠ্য হবে সর্বমহলের পাঠকদের জন্য।
রহমান বর্ণিল। ব্লগার, একটিভিস্ট, কলামিস্ট, লেখক। সন্দ্বীপ উপজেলার নিভৃত গ্রাম সন্তোষপুরে জন্ম। বেড়া ওঠা চট্টগ্রাম শহরে। চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর এবং একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ।