শরীফা আক্তার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পাঠচক্রে যোগ দেওয়ার পর থেকে সাহিত্য বিষয়ে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। সেখান থেকেই লেখালেখির প্রেরণা পেয়েছেন। পাঠচক্রে পড়ার সময় শরীফা মৌলিক প্রবন্ধ রচনার জন্য বিষয় হিসেবে বেছে নেন সাধক লালন সাঁইজির গান। লালনের গান ভাবের বিপুলতা, গভীরতা এবং চিরায়ত আবেদনের বিচারে বাঙালি এবং বিশ্বমানবের চিন্তার জগতে এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। এ বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে শরীফা আবিষ্কার করেন আধ্যাত্মিকতার এক রহস্যময় জগৎ। তিনি অনুভব করেন, বাংলায় প্রচলিত লোকধর্ম এবং বিশ্বাসের সার-নির্যাস সমন্বয় করে লালন সাঁইজি মানুষের আত্মিক মুক্তির পথ বের করতে চেয়েছেন। লালন বিশ্বাস করেছেন মানুষের সহজাত শুভময়তা এবং কল্যাণবোধে, সেই সঙ্গে সচেতন থেকেছেন তার মানবিক দুর্বলতা এবং সীমাবদ্ধতা বিষয়েও। তিনি উপলব্ধি করেছেন, ধর্মের পথ আসলে অন্ধ বিশ্বাসের পথ নয়, বরং সঠিক জীবন-দর্শনের আলোয় মানুষের আত্মশুদ্ধির পথ। আত্মশুদ্ধির আগুনে পুড়ে মানুষ 'খাঁটি সোনা' হয়ে ওঠে, লালন সাইজির সেই 'সোনার মানুষ' সন্ধান করেছেন। শরীফা তাঁর প্রবন্ধে লালন সাঁইজির গান ও দর্শনে আত্মশুদ্ধির বিভিন্ন মার্গ সন্ধান করেছেন। সেই সন্ধান-প্রচেষ্টা তাঁকে নিয়ে গেছে লালন সাঁইজির আখড়ায়, লালন-গবেষকদের দরবারে, সাহিত্য-গবেষকদের তুলনামূলক আলোচনায়, নানা গ্রন্থাগারে, ধর্মগ্রন্থে, বিভিন্ন ধর্মের বিশেষজ্ঞদের কাছে। এই প্রবন্ধটি সেই প্রচেষ্টার দলিল। লেখক এবং গবেষক হিসেবে শরীফা আলো ফেলেছেন লালনের সৃষ্টির বিচিত্র সব রূপক এবং উপমার ওপর, তাঁর চিন্তার সঙ্গে প্রচলিত ধর্ম-চিন্তার মিল-অমিলের ওপর। শরীফার সঙ্গে লালন-যাত্রায় সম্পৃক্ত হয়ে আপনিও এই মরমিয়া সাধককে এক নতুন আলোয় আবিষ্কার করুন।