বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন সদস্য হিসেবে মাঠ প্রশাসনে কাজ করতে গিয়ে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত বইগুলোর অধিকাংশই মানসম্মত হলেও বাজারে প্রচলিত সহায়ক পাঠ্যবই বিশেষত সাধারণ জ্ঞানের বইগুলো শিশুর বয়স বিবেচনায় অনেকটাই মানহীন। যেমন, পৃথিবীতে বৃহত্তম ক্ষুদ্রতম কী কী জিনিস আছে, কোন বিজ্ঞানী কী কী আবিষ্কার করেছেন, কোন দেশের মুদ্রার নাম কী, রাজধানীর নাম কী, বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় কয়টি, মাদ্রাসা কয়টি, রেল স্টেশন কয়টি ইত্যাদি তথ্য কোন বয়সের শিশুদের জন্য জানা প্রয়োজন তা বিবেচনা না করেই বাজারে প্রচলিত শিশুদের সাধারণ জ্ঞানের বইতে সংযোজন করা হয়েছে। বইগুলো দেখলে মনে হয় অধিকাংশ লেখক, প্রকাশকের শিশু মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞানের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। অথবা, চটকদার তথ্য দিয়ে বই সাজিয়ে বইয়ের কাটতি বাড়ানোই তাদের মূল লক্ষ্য। একটি শিশুবান্ধব সাধারণ জ্ঞানের বইয়ের অভাব-অনুভব থেকেই বইটি লেখার প্রয়াস। বইটি বর্ণনামূলক তবে সংক্ষিপ্ত। বর্ণনার ভেতরে বিভিন্ন তথ্য লুকিয়ে আছে। অভিভাবক বা শিক্ষকরা বইটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শিশুকে পড়ে শোনাতে পারেন। পড়ে শোনানোর সময় বিভিন্ন বিষয় উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে। পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে শিশুকে প্রশ্ন করতে হবে। শিশুর কাছ থেকে উত্তর বের করে নিতে হবে। শুধু তথ্য মুখস্থ করাই সাধারণ জ্ঞান অর্জন নয়। সাধারণ জ্ঞান মানে শিশুর বয়স উপযোগী বিভিন্ন বিষয়ে শিশুমনে সাধারণ ধারণা তৈরি করা। তাই শিশুকে প্রশ্ন করার সময় শুধু তথ্যমূলক নয় অনুধাবনমূলক প্রশ্নও করতে হবে। বাংলাদেশ বা জাপানের রাজধানীর নাম কী? এ প্রশ্নের উত্তর শিশুদের মুখস্থ করানো সম্ভব, তবে রাজধানী কাকে বলে তা বোঝানো কঠিন। সাধারণত পাঁচ-ছয়-সাত বছরের শিশুর মধ্যে রাজধানী কী তা বোঝার ক্ষমতা তৈরি হয় না। তাই একটু ঘুরিয়ে শিশুকে বোঝাতে হবে। তাকে বলতে হবে, যে শহরে দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বাস করেন, বড় বড় সরকারি অফিস, উঁচু উঁচু দালান থাকে তা একটি দেশের রাজধানী বা প্রধান শহর বা ক্যাপিটাল সিটি। ‘ছোটদের জন্য সাধারণ জ্ঞান’ বইটি বাজারে প্রচলিত সাধারণ জ্ঞানের বইগুলো থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। বইটিকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে পাঁচ থেকে দশ বছরের শিশুদের যে বিষয়গুলো জানা দরকার তা যেন সহজভাবে তারা জানতে পারে। শিশুর বয়স বিবেচনা করে শুধু প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু ও তথ্য সন্নিবেশ করা হয়েছে। আশা করি বইটি শিশুদের সাধারণ জ্ঞানে সমৃদ্ধ করবে। বইটির বিষয়বস্তু নির্ধারণ করতে গিয়ে দেশি-বিদেশি অনেক বইয়ের সাহায্য নেয়া হয়েছে। বইয়ে যে সকল তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে তার কোনো রেফারেন্স বা তথ্যসূত্র দেওয়া হয়নি। তথ্যগুলো প্রতিষ্ঠিত সত্য এবং তথ্যগুলো সম্পর্কে মানুষ কম-বেশি অবগত।