হৃদয়, ফুসফুস, কিডনি, লিভার, স্টমাক, চোখ, কান, হাড়, মাংস, রক্ত চামড়া, দাঁত এমনকি চুল বা লোম পর্যন্ত তৈরি করা, তার উন্নতী এবং সক্রিয়তা বজায় রাখার পিছনে নিশ্চয়ই আছেন একজন সূক্ষ্ম পরিকল্পনাকারী। আমাদের মাথায় বা দেহে অনেক চুল দেখা যায়। এ নিয়ে হয়তো সাধারণ মানুষ আমাদের মাথা ঘামাই না। কিন্তু এখানেও আছে সৃষ্টিকর্তা ও তাঁর শিল্পনিপুণতার নিখুঁত নিদর্শন । মানুষের মাথায় চুল থেকে এক লক্ষ থেকে দু'লক্ষ পর্যন্ত। প্রায় প্রতিদিন শতাধিক চুল খসে যায় তেমনি আবার জন্ম হয় নতুন চুলের। এই চুলের সঙ্গে সংযুক্ত মোটামুটি ১১টি জিনিস। ১. চুলের একেবারে গোড়ায় থাকে স্নায়ু, ২. রক্তবাহী নল, ৩. ইরেকটর বা ধারক পেশি, ৪. সেরাসিয়াস বা তৈলাক্ত গ্রন্থি, ৫. কিউটিকল বা চুলের উপর একটা মজবুত নিকেল, ৬. করটেক্স চুলের মুখাংশ, ৭. চুলের মধ্যে ফাঁপা মুখাংশ, যেটাকে বলা হয় মেডুলা, ৮. চুল অঙ্কুরিত হওয়ার জায়গাটির নাম প্যাপিল্লা, ৯. বীজকোষ, ১০. চামড়ার মধ্যে যে অংশ ঢুকে থাকে, ১১. চুলের মূল দণ্ড প্রভৃতি । শুধু চুলের ব্যাপারেই যদি থাকে এত কারিগরি তাহলে সমগ্র দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কত যে কারিগরি আছে তার ইয়ত্তা নেই। কোনো চিন্তাশীল মানুষ যদি তাঁর নিজের দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা করেন তাহলে বিস্ময়ে অভিভূত হতেই হবে তাঁকে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গঠনপ্রণালী এবং একটির সঙ্গে অন্যটির যোগ বিস্ময়কর।
ইতিহাসবিদ আল্লামা গোলাম আহমাদ মোর্তজা: ইনি হলেন সেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মহান ব্যাক্তি গোলাম আহমদ মোর্তাজা যার বই এবং তাকরিরের মাধ্যমে মানুষ হাজারো ইতিহাস জানতে পেরেছে। গোলাম আহমাদ মোর্তজা জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের'র বর্ধমান জেলার মেমারিতে। তিনি একজন বক্তা,গবেষক ও লেখক। তিনি দুই বাংলার অর্থাৎ ভারত বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয়। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে যেমন পলাশীর যুদ্ধ,অন্ধকূপ হত্যাকান্ড, মহামতি আকবরের কথা এমনি অনেক নতুন তথ্য তিনি প্রমাণসহ পেশ করেন। যা আসলে আমরা যেভাবে জানি সেভাবে বলা হয়নি। তাঁর পুস্তক পাঠে বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলে পড়ে যায় পাঠক, কিন্তু গোলাম আহমাদ মোর্তজা এমনভাবে তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেছেন। তাতে তাকে মেনে নিতে হয়েছে ভারতের বর্তমান ঐতিহাসিকদের। বিখ্যাত ইতিহাসবিদরা তার তথ্য মেনে নিয়েছেন এবং প্রশংসা করেছেন। ইতিহাসের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য দেন যা চাপা পরে ছিলো ইতিহাসের পাতায়। তিনি সেগুলোকে সামনে তুলে আনার চেষ্টা করেন। তাকে নিয়ে এ পর্যন্ত ভারতে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় তিনি বক্তব্য দিয়ে থাকেন এবং পশ্চিমবঙ্গে তিনি "বক্তা সম্রাট' নামে পরিচিত। তিনি বিখ্যাত হয়েছেন তাঁর কয়েকটি ইতিহাসের বই ও ইতিহাস ভিত্তিক বিতর্কিত বক্তব্যের মাধ্যমে। ইতিহাসের ইতিহাস, চেপেরাখা ইতিহাস,বাজেয়াপ্ত ইতিহাস,পুস্তক সম্রাটসহ অনন্য ইতিহাসের বইয়ের মাধ্যমে তিনি সর্বপ্রথম আলোচনায় আসেন। ভারতের গতানুগতিক ইতিহাস বিষয়ক পাঠ্যপুস্তকগুলোতে মুসলিমদের নিয়ে লিখিত বিভিন্ন তথ্য তিনি বানোয়াট দাবী করেন। সেই তথ্যগুলোর বিরোধীতা করেন এবং সেগুলো মিথ্যা তথ্য তিনি প্রমাণসহকারে খণ্ডন করার চেষ্টা করেন এই গ্রন্থ গুলোতে। পাশাপাশি বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ,গান্ধীজি, রাজা রামমোহন রায়,হরপ্রসাদ শাস্ত্রী,দেবেন্দ্ররনাথ ঠাকুর সম্বন্ধে সমালোচনা করেন এবং তাদের চাপা পরা ইতিহাস সামনে তুলে এনে প্রমাণসহকারে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন যার ফলে পশ্চিমবঙ্গের সরকার ১৯৮১ সালে তাঁর একটি গ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করেন। এরপর তিনি একেরপর এক ইতিহাসের বই প্রকাশ করতে থাকেন,যার সিংহভাগ বই'ই সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের সরকার বাতিল করেন। তাঁর উপর সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ আনায় গোলাম আহমাদ মোর্তজা তাঁর "বাজেয়াপ্ত ইতিহাস" গ্রন্থে এর প্রতিবাদ করেন। আল্লাহ তায়ালা হযরতের নেক হায়াত দারাজ করেন এবং মানুষের সামনে বই আকারে হোক অথবা ওয়াজ, বক্তৃতা মাধ্যমে হোক সত্যকে উন্মেচন করার তৌফিক দান করুন।