প্রথমেই বলে নিচ্ছি যে এমন বিশ্বাসের কোন অবকাশ নেই যে আপনি যা ভাববেন, আপনার জীবনে অবশ্যই তাই ঘটবে। আত্মবিশ্বাস মানে আত্ম-দাসত্য নয়। নিজের মনের পূজা নয়। আল্লাহ তায়ালা আপনাকে যা দিবেন, আপনি তাই পাবেন। বেশিও নয়, কমও নয়। তাহলে নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে নেওয়ার কি অর্থ? এর অর্থ হচ্ছে আপনি যেমন চেষ্টা করবেন, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে তেমন দান করবেন! অর্থাৎ নিজের সর্বস্ব দেয়ার পর একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করা জরুরী! ভালো-মন্দ ফলাফল আল্লাহ তা'আলারই নির্ধারণ। কাজ করার দায়িত্ব আপনার, ফলাফল নির্ধারণের মালিক আল্লাহ তায়ালা। এই কথা যত দ্রুত মন থেকে মেনে নিবেন এতই আপনার জন্য ভালো। এবার চলুন, নিজের গল্প নিজে সাজিয়ে গুছিয়ে নেয়ার কথায় আসি। "আপনি নিজেই আপনার গল্পের লেখক, পরিচালক এবং প্রধান অভিনেতা। মনে করুন আপনি একটি বই লিখছেন। লিখা চলছে, ছাপা হয়নি। যেকোন অধ্যায় এখনো পরিবর্তন করা সম্ভব। কোন অভ্যাস, আচরণ এবং বিশ্বাস পরিবর্তন করা সম্ভব। এভাবে এখনই ভাবতে শুরু করুন। আপনার জীবনের গল্প যদি আপনি পরিবর্তন করতে চান, তাহলে এখনই তা পরিবর্তন করে ফেলুন।" অতীতের গল্প মনে ধরে না রেখে নতুন গল্প তৈরিতে মনোযোগী হোন। যেদিন থেকে আমি বুঝতে শিখলাম যে, আল্লাহর উপর ভরসা করে কাজ করতে থাকলে জীবন অনেক মাত্রায় পরিবর্তন হয়, তখন থেকে এখন পর্যন্ত মনের ভেতর এই প্রক্রিয়া নিয়েই বেঁচে আছি, আলহামদুলিল্লাহ। আপনার অতীত জীবনে কি ঘটেছিল তাতে গুরুত্ব না দিয়ে, আপনার ভবিষ্যৎ জীবন আপনি সুষ্ঠুভাবে গড়ে তুলবেন, এই প্রতিজ্ঞা করুন। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎকে আরো সুন্দর করে গড়ে তোলা যায়। আপনি নিজেকে পুনরায় উদ্ভাবন বা তৈরি করতে পারেন। প্রতিটি দিনই নতুন করে জীবন শুরু করার সুযোগ নিয়ে আসে। আপনি কোন পরিচয়ে পরিচিত হবেন, তা আপনাকে মনস্থ করে নিতে হবে এখনই। তাই আজকে থেকে আপনি কি হতে যাচ্ছেন তা অনেক বেশি মাত্রায় আপনার সিদ্ধান্ত এবং কাজের উপর নির্ভর করে। আপনি আপনার গল্প সাজানোর জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন তাও আপনার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে। পুনরায় নিজের গল্পকে তৈরি করার জন্য এই বইটিতে কিছু অনুশীলন আছে। আপনি যদি মনস্থির করে নেন যে, আপনি পরিবর্তন চান তাহলে অনুশীলনগুলোর মাধ্যমে নিজের গল্পের পরিবর্তন করুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি নিজেই পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন। তবে নিজেকে এই অনুশীলনের মধ্যে রাখা সহজ হবে না, এর জন্য অবশ্যই শৃঙ্খলা, ধৈর্য এবং অধ্যাবসায়ের প্রয়োজন অনেক। এর ফলাফল আসবেই ইনশাআল্লাহ। এখনই আপনার সময়। চেষ্টা করে যান, নিজের গল্পটি পরিবর্তন করার জেদ ধরুন। আল্লাহর শুকরিয়া, একজন মাইন্ড ট্রেইনার হিসেবে আমার জীবনে হাজার হাজার মানুষের জীবন পরিবর্তন হতে দেখেছি। অনেকেই এসে ট্রেনিংয়ের প্রশংসা করেন। আমার উত্তর সব সময় একটাই; চেষ্টা আমাদের পক্ষ থেকে এবং পরিবর্তন আল্লাহর পক্ষ থেকে। যেহেতু আপনি নিজের জীবন পরিবর্তনের লক্ষ্যে এই বইটি পড়ছেন, সেহেতু আমি আপনাকে অনুরোধ করছি যে প্রতিটি লাইন সময় নিয়ে মনোযোগের সাথে পড়ুন। বইয়ের কোন লাইনে কোন কথায় যদি এমন মনে হয় যে আমি আপনাকে আপনার সৃষ্টিকর্তা থেকে দূরে সরিয়ে আপনার উপর বিশ্বাস করতে বলছি, তাহলে ধরে নেবেন যে আমি লিখে বুঝাতে পারিনি অথবা ভুল করে লিখেছি। সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি ছাড়া কোন সফলতা নেই। বইটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন এবং নিজেকে গড়তে থাকুন।
আমি সাবিত রায়হান। এখানে দুটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার প্রয়াস করছি। প্রশ্ন ১: আমি কেন এই বইটি লিখার উদ্যোগ নিলাম? সাবিত ইন্টারন্যাশনাল যদিও জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ৬০ লক্ষেরও বেশি মানুষের কাছে অত্যন্ত সুপরিচিত, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্লেয়ারদের জন্য পরম আস্থার কেন্দ্রবিন্দু, ACI এবং United Group সহ দেশের বড় বড় কোম্পানির কর্পোরেট মাইন্ড ট্রেইনিংয়ের নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান তবুও ব্যক্তিগতভাবে আমি নিতান্তই একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে সুখী জীবনযাপন করতে ভালোবাসি এবং প্রতিনিয়ত মনের শক্তি বর্ধনের অনুশীলন করতে পছন্দ করি । মহান আল্লাহ তা'য়ালার দয়ায় এবং আপনাদের সকলের ভালোবাসায় লক্ষ মানুষের মনের এতটাই কাছে পৌঁছার সুযোগ হয়েছে যে সকলের গুরুত্বপূর্ণ অনেক অনেক প্রশ্ন থাকে যার উত্তর দেওয়ার ইচ্ছে থাকা সত্বেও সময় স্বল্পতার কারণে অনিচ্ছাকৃতভাবে উত্তর দেওয়ায় ব্যর্থ হচ্ছি। তাই অনেক ভেবেচিন্তে আমার বিগত জীবনের সকল ট্রেনিংয়ের অভিজ্ঞতা ও পঠিত বই-পুস্তকের তথ্য সমুহকে কাজে লাগিয়ে মনের শক্তি নামে এই বইটি লিখেছি যেনো আমার জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরেও মানুষের প্রশ্নের উত্তর এই বইটি বহন করতে সক্ষম হয়। প্রশ্ন ২: আপনি কেন এই বইটি পড়বেন? কেউ যখন মানসিকভাবে কষ্টে থাকে তখন তার নিজের মনের শক্তি বুঝতে না পারার যন্ত্রণা, ইমোশন ম্যানেজ করতে না পারার বেদনা এবং রিলেশনশিপ সুন্দর করতে না পারার আর্তনাদ আমাকে এই বইটি লিখতে বাধ্য করেছে। মানুষের কষ্টের অনুভূতিগুলোই শুধু আমাকে এই বইটি লিখতে তরান্বিত করেছে বিষয়টি এমন নয় বরং জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত অনেক মানুষের ভেতরকার সুপ্ত ক্ষমতাকে জাগ্রত করতে সক্ষম হওয়ার অর্জনও আমাকে ভিষণভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। অনেক মানুষ খুঁজে পেয়েছে মনের শক্তি, মানসিক যন্ত্রণামুক্ত নতুন জীবন ও জীবনে নানা সমস্যার যুক্তিপূর্ণ সমাধান। ভাবতে ভাবতে অনুভূত হলো যে, সমাজের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা আমার উপর অনেক বেশি এখন। আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে মাইন্ড ট্রেইনিংয়ের যে বিষয়গুলো অনুশীলন করে থাকি এবং অন্যকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি, তা থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ফলপ্রসূ বিষয়গুলো এই বইয়ে সংরক্ষণ করেছি। সকল শ্রেণি এবং পেশার মানুষের জন্য এই বইটি লিখেছি যেন প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং কর্মজীবনে সফল হতে পারেন।