এই বইতে প্রফেসর নুরুল ইসলাম বিভিন্ন অর্থনৈতিক ইস্যুতে গৃহীত পাকিস্তান সরকারের নীতিমালার প্রশ্নে বাঙালিদের গড়ে তোলা প্রতিরোধ সংগ্রামের একটি গভীর বিশ্লেষণ করেছেন। আর এই অর্থনৈতিক ইস্যুই বাংলাদেশের জন্মের অন্যতম কারণ। তিনি রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠার শুরুর দিকে গৃহীত বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ও যুগান্তকারী অর্থনৈতিক নীতিমালার ব্যাপারে বিশদ ব্যাখ্যা রেখেছেন।লেখক একজন ভেতরের লোক হিসেবে এই বইতে অর্থনৈতিক প্রশ্নে পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যকার বিশাল বিভেদের বিষয়ে এমন অনেক প্রসঙ্গের উল্লেখ করেছেন যা আগে আর কেউ কোথাও উল্লেখ করেননি। তিনি শেখ মুজিবের দেয়া ছয়-দফা দাবির অনেক খুঁটিনাটি বিষয় এখানে আলোচনা করেছেন-যা সেকালে অনেকের কাছেই অজ্ঞাত ছিল। তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে বাংলাদেশের শুরুর সময়কার বেশ কিছু নীতি নির্ধারণ ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের পেছনের যুক্তিগুলো তুলে ধরেছেন। চাকরির সূত্রে সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে ঐ সকল বিষয়ে জ্ঞাত হবার অধিকতর সুযোগ তাঁর হয়েছিল।ওই সব গৃহীত নীতির কোন কোনটির ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন রকম হতে পারে এবং এ বিষয়ে অদ্যাবধি বিতর্ক বিদ্যমান। তা সত্ত্বেও প্রফেসর ইসলামের উল্লেখিত ঘটনা ও সে সবের ব্যাখ্যা দীর্ঘদিনব্যাপী বিরাজমান তথ্য-শূন্যতা হ্রাসে সহায়তা করবে। উপসংহারে তিনি কতকগুলি এমন সমসাময়িক নীতিমালার বিষয় উল্লেখ করেছেন যেগুলি অতীতেও যেমন ভবিষ্যতের জন্যও তেমনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান প্রধান বিষয় ও ঘটনার বিশ্লেষণধর্মী এই কাজে তিনি ব্যবহার করেছেন তাঁর উপস্থিত মতে টুকে রাখা লেখা, অনেক অপ্রকাশিত প্রতিবেদন, দলিল ও চিঠিপত্রাদি। বইটি ছাত্র-শিক্ষক ও নীতি নির্ধারকদের জন্য অত্যন্ত জরুরি বলে বিবেচিত হবে। আর যারা দেশ গঠনে রাজনৈতিক অর্থনীতির ভূমিকার বিষয়ে আগ্রহী তারাও এই বই পাঠে সমান উপকৃত হবেন।
প্রফেসর নুরুল ইসলাম ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত পরম্পরাগতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক, পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকনােমিক্স (পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ)-এর পরিচালক ও সদ্যজাত বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের প্রথম ডেপুটি চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৭৫ সালের পরে তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সেন্ট এন্টোনিজ কলেজের ফেলাে, জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সহকারী মহাপরিচালক, এবং ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা ও পরে এমিরিটাস ফেলাে ছিলেন। তিনি সফরকারী শিক্ষাব্রিদ হিসেবে ইয়েল ও কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি, লন্ডন ও নেদারল্যান্ডসের স্কুল অব ইকনােমিক্সে শিক্ষা-সংক্রান্ত বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতিসংঘের কমিটি অব ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানিং পলিসির প্রথমে সদস্য ও পরে চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য, উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট নীতিমালা ইত্যাদি বিষয়ে প্রচুর লেখালেখি করেছেন। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে আছে ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানিং ইন বাংলাদেশ: এ স্টাডি ইন পলিটিক্যাল ইকনােমি (ইউপিএল, ১৯৭৯, পুনর্মুদ্রণ, ১৯৯৩); ডেভেলপমেন্ট স্ট্রাটেজি অব বাংলাদেশ (পারগামন, ১৯৭৮); ফুডগ্রেইন প্রাইস স্ট্যাবিলাইজেশন ইন ডেভেলপিং কান্ট্রিজ: ইস্যুজ অ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্সেস ইন এশিয়া (আইএফপিআরআই, ১৯৯৬); এবং এক্সপ্লোরেশন ইন ডেভেলপমেন্ট ইস্যুজ: সিলেক্টেড আর্টিকেলস অব নুরুল ইসলাম (আশগেট, ২০০৩)।