আধুনিকতা ও প্রগতির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ, উভয় গোষ্ঠী তৎপর হয়ে ওঠে এবং নিজেদের মতামত প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। ইসলাম ধর্মে নারীর মর্যাদা ও অধিকারের দিকগুলো কীভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, ব্যক্তিগত ও জনজীবনে নারীর অবস্থান, কর্মপরিধির গণ্ডি কতটুকু রয়েছে এবং তা বিশ্বব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ ও যুগোপযোগী, তা বিচার করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এর প্রেক্ষিতে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে সংস্কারপন্থি অথচ ধর্মীয় রীতি ও ঐতিহ্যে বিশ্বিববাসী নেতাগণের জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার বিকল্প ইসলামী ব্যবস্থা দ্বারা একটি নতুন প্রতিবেশ বিনির্মাণের চেষ্টা গতি সঞ্চার করে। এর অংশ হিসেবে গত কয়েক দশক ধরেই মুসলিম বিশ্বে ব্যক্তি ও জনজীবনের বিভিন্ন দিকসমূহ, বিশেষ করে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, পোশাক-পরিচ্ছদ এবং পারিবারিক মূল্যবোধ প্রভৃতি বিষয়ে সংস্কারের জন্য বহুবিধ ইসলামী সংগঠন, আন্দোলন ও প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়। ফলে জেন্ডার, নারীবাদ ও ইসলামী নারীবাদ প্রভৃতি প্রপঞ্চ ধর্ম, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর অবস্থা ও অবস্থান নির্ণয়ের এক-একটি সূচক হিসেবে একাডেমিক অঙ্গনে চর্চিত হতে শুরু করে। “নারী ও ইসলাম” গ্রন্থটিকে এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। গ্রন্থের মূল লক্ষ্য হলো ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম নারীর মধ্যকার সম্পর্ক নির্ণয়। ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তি কোরআন ও হাদিসের আলোকে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও দায়িত্বের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর অবস্থান সম্পর্কে গ্রন্থটিতে আলোচিত হয়েছে; যেখানে নারী-পুরুষের সমতা ও পার্থক্যের বিষয়গুলো বিশ্লেষণের প্রয়াস রয়েছে। বর্তমানকালে একাডেমিক অঙ্গনে নারীর মানবিক, পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে যে ব্যাপক বিস্তৃত আলোচনা চলমান, তার অনেকগুলোই এই গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যেমন, প্রচলিত নারীবাদ ও ইসলামী নারীবাদের গতি-প্রকৃতি, মুসলিম নারীর ঐতিহাসিক ভূমিকা, মুসলিম পরিবারে নারীর আদর্শিক রূপ; পর্দা প্রথা, বিবাহ, তালাক ও সম্পত্তির অধিকারের ক্ষেত্রে তার অবস্থান; সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রে নারীর স্বক্ষমতা ও অধিকার প্রভৃতি সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী এবং কেন, তা যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে উপস্থাপনের প্রয়াস লক্ষ করা যায়। তবে গ্রন্থটির উল্লেখযোগ্য অধ্যায়গুলোর মধ্যে ইসলামের প্রথম যুগ থেকে শুরু করে ঔপনিবেশিক আমলে দুই বাংলার বিখ্যাত মুসলিম নারীর ইতিহাস অন্যতম। তাছাড়া বর্তমান বিশ্বের যান্ত্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে এসব ক্ষেত্রে যে কর্মপরিধি তৈরি হয়েছে তাতে নারীর যুক্ততার দিকগুলো গ্রন্থটিতে সন্নিবেশিত হয়েছে এবং পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় নারীর এই ভূমিকা ও ইসলামী বিধান কতটুকু সমর্থন কিংবা বাতিল করে, সে সম্পর্কেও ধারণা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে গ্রন্থটি একাডেমিক অঙ্গনে এসব বিষয়ে আগ্রহী পাঠকের রসদ যোগাবে।