উনিশ আর বিশ শতকে ইউরোপের আর্ট সিন ছিল পুরাই আউলা, বিশেষত ফ্রান্স। নো রিগার্ড ফর ট্রেডিশন। একটার পর একটা নতুন মুভমেন্ট চলতেসে। এক্সপ্রেশনিজম, সিম্বলিজম, ফোভিজম, কিউবিজম, দাদাইজম, ইউ নেম ইট! তবে খুব সম্ভবত সেই সময়ের সবচাইতে ইম্প্যাক্টফুল মুভমেন্ট ছিল সুরিয়ালিস্ট মুভমেন্ট। আমাদের জন্য সম্ভবত সুরিয়ালিজম সবচেয়ে এক্সেসিবল ভিজুয়াল মিডিয়ামে। দালির সেই গলন্ত ঘড়ি, কিংবা ম্যাগ্রিটের চিমনির ভিতরকার ট্রেন, এগুলাই তো মাথায় আসে সুরিয়ালিজমের কথা ভাবলে, নাকি? কিন্তু আদতে সুরিয়ালিজমের জন্ম হইসিল লিখিত মিডিয়ামে। এপোলোনিয়র নিজের এক নাটকরে প্রথম নাম দিসিলেন সুরিয়াল (বাস্তবতার চাইতেও বেশি কিছু বুঝাইতে) এবং তারপর ব্রেতো সেই শব্দটারেই এক্সটেন্ড করলেন ইচ্ছামত। একদিন তিনি স্বপ্নে দেখলেন একটা জানালায় তিনি দুইভাগ হয়া দাঁড়ায়ে আছেন। এই ইমেজটাই তারে প্রথম তাড়ায়ে বেড়াইল। সুরিয়ালিজমরে ব্রেতো দেখাইতে চাইসেন একটা ভৌতিক স্বরের মত, একটা প্রফেটিক উইজডম। সক্রেটিসের ডেমন ছিল যেমন। তিনি নিজেরে এই স্বরের কাছে ছাইড়া দিতে পারসিলেন, প্রস্তুত ছিলেন নিজেরে এই স্বর দ্বারা ডিকটেটেড হইতে দিতে। মিলান কুন্দেরা তার 'আর্ট অফ দ্য নভেলে' প্রায় এরকমই উইজডম অফ নভেল নামে একটা ধারণার কথা বলসিলেন। তবে আগে যে বললাম, নো রিগার্ড ফর ট্রেডিশন, তা হয়তো পুরাপুরি সত্য না। ব্রেতোর একলার পক্ষেই কি সম্ভব হইত আর্টে এত রেডিকেল পজিশন নেয়া, যদি না আগে অল্প হইলেও তার পাটাতন তৈয়ার হইয়া থাকতো? সুরিয়ালিজমের ঠিক আগের দুইটা মুভমেন্ট, সিম্বলিজম আর দাদাইজম থিকা অনেক নিসে সুরিয়ালিস্টরা। ম্যাক্স আর্নস্টের কোনো ছবিতে পাখি দেখলে বুঝবেন সে যৌনতা বুঝাইতেসে, দালির কোনো ছবিতে শামুক মানেই ফ্রয়েড। এগুলা সিম্বলিজমের দান। আর দাদাইজম নিজে খুব বেশিদূর যাইতে পারে নাই। কিন্তু তারা আগের সবকিছু তছনছ কইরা দিতে পারসিল। নতুন কিছু আসার পথ তৈরি করতে পারসিল। আমাদের এই রেশনাল দুনিয়া, যা চালাইতেসে সুন্দর সুট-বুট পরা, সহীহ উচ্চারণে কথা বলা, নিয়ম মাইনা চলা সেন্সিবল মানুষজন, তারাই তো লাখ লাখ মানুষরে বাধ্য করলো বিশ্বযুদ্ধে মরতে। তাইলে এই রেশনালিটি, এই নিয়মকানুন দিয়া আর কী হবে? তারপর এই দাদাইস্টরা সব লণ্ডভণ্ড কইরা দিলেন। চিরাচরিত সব আর্টফর্ম দিয়া জগাখিচুড়ি পাকায়ে ফেললেন। ব্রেতো নিজেও এই দলের লোক ছিলেন। এইখান থিকাই তিনি নিসেন তার সাহস।