প্রাক-ঔপনিবেশিক আমলে বাংলার শিল্পোদ্যোগ, উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যের খ্যাতি ছিল বিশ্বজুড়ে। ব্রিটিশ শাসনে বাংলার অর্থনীতি সে গৌরব হারায়। এ কালপর্বে বাঙালি হিন্দু ব্রিটিশদের আনুকূলো চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে অগ্রসর হতে শুরু করে। বিপরীতে বাঙালি মুসলমান প্রান্তিক সম্প্রদায়ে পরিণত হয়। শিক্ষা, পুঁজি কিংবা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা—কোনোটাই তাদের জন্য সহজলভ্য ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর কথিত আশরাফ মুসলিম বা অবাঙালিরা ও শহুরে অভিজাতরা সব সুযোগ-সুবিধা নিজেরাই নিতে চেয়েছে। বাংলার গ্রামবাসী অনভিজাত ও প্রান্তিক মানুষ হিসেবে টিকে ছিল। শেখ আকিজ উদ্দিন এমনই প্রান্তিক বাঙালি মুসলিম সমাজের প্রতিনিধি। আক্ষরিক অর্থেই তাকে শূন্য থেকে পথচলা শুরু করতে হয়েছে। সামাজিক বৈরিতা ও পশ্চাৎপদতাকে ডিঙিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন স্বনির্মিত উদ্যোক্তা হিসেবে। প্রকৃতপক্ষে বাঙালি মুসলিম সমাজের প্রথম প্রজন্মের স্বনির্মিত উদ্যোক্তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। ব্যবসা বা শিল্পোদ্যোগের সূচনা ও সম্প্রসারণের জন্য যেসব অনুষঙ্গের প্রয়োজন (যেমন শিক্ষা, মূলধন, নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা), তার কিছুই তিনি পাননি। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রার পর নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে তার এগিয়ে চলা কোনোভাবেই সহজ ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে প্রথা ও প্রতিষ্ঠানের বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেই একটি পথের পুরোধা হয়ে উঠেছিলেন। স্বশিক্ষিত ও স্বনির্মিত উদ্যোক্তা শেখ আকিজ উদ্দিন স্রেফ লৌকিক জ্ঞানে ভর করে শূন্য থেকে শীর্ষে পৌঁছেছেন, যে জ্ঞানের মূল্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।