প্রত্যেক মাতাপিতাই সুসন্তানের স্বপ্ন লালন করেন যারা বড় হয়ে পরিবার এবং সমাজের জন্য দায়িত্বশীল ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। আগের তুলনায় শিক্ষিত, ছোট পরিবার এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হওয়া সত্ত্বেও এ যুগের মাতাপিতারা সন্তান লালন-পালন নিয়ে অনেক অজানা এবং অচেনা চ্যালেঞ্জের কারণে দিশেহারা অনুভব করেন। ডিজিটাল প্রযুক্তির অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি এবং সহজলভ্যতার কারণে সামাজিক আবহের যে আমুল পরিবর্তন হচ্ছে যা সিংহভাগ পিতামাতার কাছে কল্পনাতীত মনে হতে পারে। শরীরের সব পূর্নাংগ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে জন্ম গ্রহন করলেও একটি শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশ শুরু হয় ভুমিষ্ঠ লাভের পর থেকে এবং ২০ বছর বয়সের মধ্যে তা পরিপূর্ণতা পায়। শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে পরিবেশের (পিতামাতার সাথে সম্পর্ক, সামাজিক যোগাযোগ, প্রকৃতির সাথে সংস্পর্শ, বন্ধুবান্ধবের প্রভাব, ডিজিটাল মিডিয়া ইত্যাদি) ভূমিকা রয়েছে যা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। শিশুদের বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপে (০-৫ বছর) নিউরোলোজিক্যাল কিছু ত্রুটি (যেমন-অটিজম, এডিএইচডি, লিখতে-পড়তে অসুবিধা), থ্যালাসেমিয়াসহ আরো স্বাস্থ্যগত বিষয় সম্পর্কে আমাদের দেশের পিতামাতারা অসচেতন। শিশুর স্বাভাবিক এবং অস্বাভাবিক বিকাশ (০-৬ বছরের চেকলিস্টসহ) নিয়ে বইটিতে আলোচনা করা হয়েছে যেন পিতামাতারা সচেতন হতে পারেন। মস্তিষ্ক বিকাশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সময়কালে (৯-১৪ বছর) কিশোর-কিশোরীদের ধর্মীয় চিন্তা-চেতনা, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, আত্মপরিচয়, যৌন পরিপক্বতা ইত্যাদির বিকাশ ঘটে। এই সময়টিতে এলজিবিটি বা ট্রান্সজেন্ডার মতাদর্শ, পর্নোগ্রাফি, মাদকাসক্তি, স্ক্রিন (স্মার্টফোন, ডিজিটাল ডিভাইস) আসক্তি, অপর্যাপ্ত ঘুম ইত্যাদি নতুন চ্যালেঞ্জিং ইস্যুগুলো গবেষণালব্ধ তথ্যের মাধ্যমে আলোচনা করে এর মোকাবেলার কৌশল নিয়ে বইটিতে দিক-নির্দেশনা রয়েছে। বইটি সকল শ্রেনীর পাঠকদের জন্য উপযোগী, বিশেষ করে পিতামাতা, শিক্ষক এবং রিলিজিয়াস স্কলারদের জন্য অবশ্যপাঠ্য।
ডক্টর মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন ২০ বছর যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা এবং লাইফ সায়েন্স ও জনস্বাস্থ্য সেক্টরে গবেষণা করছেন। তিনি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুর থেকে মলিকিউলার বায়োলজিতে পিএইচডি সম্পন্ন করে ডিউক-এনইউএস গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল স্কুল এবং ন্যাশনাল ক্যান্সার সেন্টার সিঙ্গাপুর (এনসিসি)-এ পোস্টডক্টরাল রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন। ড. হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইক্রোবায়োলজিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। তিনি দীর্ঘ ১০ বছর সিংগাপুরে গবেষণার প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। এরপর দেশের স্বনামধন্য এক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতেও বায়োফার্মাসিউটিক্যাল ড্রাগ তৈরির প্রজেক্টে সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) স্কুল অফ এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড লাইফ সায়েন্স–এ সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। এর পাশাপাশি তিনি অনারারি প্রিন্সিপাল ফেলো হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার উলংগং ইউনিভার্সিটির সাথে যুক্ত রয়েছেন। ড. হোসেন বায়োমেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশন (বিআরএফ)-এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। বিআরএফের উদ্যোগে মাঠ পর্যায়ে (জামালপুর) থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধ নিয়ে দীর্ঘ ৬ বছর যাবৎ গবেষণা করছেন। তিনি সায়েন্স কমিউনিকেটর হিসেবে গত ২৫ বছর ধরে লেখালেখি করছেন। করোনা অতিমারির সময় তিনি জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নীতি-নির্ধারণে সহযোগিতা করতে জনপ্রিয় মূলধারার সংবাদ মাধ্যম এবং টিভি চ্যানেলগুলোতে অবদান রেখেছেন।