কুরআন ও সুলতান পরস্পর সহযোগী দুটি শক্তি। একটি অপরটির প্রয়োগকে সার্থক ও শক্তিশালী করে। রাষ্ট্র ইসলামি দাওয়াহর জুতসই ক্ষেত্র তৈরি এবং ইলাহি আইন প্রয়োগের মাধ্যমে কুরআনকে জীবন্ত করে তোলে। অপরদিকে কুরআন রাষ্ট্রে সুবিচার-অধিকার-শান্তি-সম্প্রীতি সুনিশ্চিত করে। এভাবেই একটি রাষ্ট্র হয়ে ওঠে দ্বীন ও দুনিয়ার অপূর্ব মোহনা। ইসলামি জীবনব্যবস্থার প্রকৃত ফল পেতে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্র্য। ইসলামি আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে দাওয়াহ যেখানে নিষ্ফল, রাষ্ট্র সেখানে কার্যকর উপাদান। তাই ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সক্রিয় রাজনীতির বিকল্প নেই; যদিও প্রতিষ্ঠিত ও বিরুদ্ধবাদী শক্তি এর প্রবল বিরোধিতা করে। আর তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো, বিভ্রান্তি সৃষ্টির মাধ্যমে মুসলিম যুবসমাজকে রাজনীতিবিমুখ করে পৃথিবীর নেতৃত্ব থেকে মুসলমানদের সরিয়ে রাখা। উসতাজ কারজাভি (রহ.) জীবনভর মুসলিম উম্মাহর পুনর্জাগরণে কাজ করেছেন। সেক্যুলার ও ইসলামবিরোধী শক্তির বিপরীতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পারস্পরিক মতভেদ ভুলে। ইসলাম ও রাজনীতি গ্রন্থটি মূলত সে প্রচেষ্টারই বহিঃপ্রকাশ। বর্তমান সন্দিহান মুসলিম যুবসমাজের জন্য এ গ্রন্থটি হতে পারে সুদৃঢ় পথনির্দেশিকা। পাশাপাশি সেক্যুলারদের সাথে চলমান বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধে ইসলামপন্থিদের চিন্তা গঠনে হতে পারে এক বলিষ্ঠ দলিল।
শায়খ প্রফেসর ড. ইউসুফ আবদুল্লাহ আল কারযাভি (১৯২৬-) মিশরীয় বংশোদ্ভূত একজন প্রভাবশালী আধুনিক ইসলামি তাত্ত্বিক ও আইনজ্ঞ। তিনি মুসলিম ধর্মতত্ত্বিকদের অভিজাত সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্সে (International Union of Muslim scholars)-এর সাবেক চেয়ারম্যান। জন্ম ১৯২৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। মিসরের উত্তর নীলনদের তীরবর্তী সাফাত তোরাব গ্রামে। দুই বছর বয়সে বাবা ইন্তিকাল করলে চাচা তার লালন-পালন করেন। দশ বছর বয়সে তিনি সম্পূর্ণ কোরআন হিফজ করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা করেন আল-আজহার কারিকুলামে। প্রাচীন ইসলামী বিদ্যাপীঠ আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উসুলুদ দ্বীন অনুষদ থেকে অনার্স, আরবি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। মিসরের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘Institute of Imams’ এর পরিদর্শক হিসেবে কর্মজীবনে পদার্পণ করেন। কিছুদিন তিনি আওকাফ মন্ত্রণালয়ের ‘Board of Religious Affairs’ এ কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৭ সালে তিনি কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শরীয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের প্রতিষ্ঠাকালীন ডীন নিযুক্ত হন। ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি এখানে কর্মরত থাকেন এবং একই বছর তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্র’। ১৯৯০-৯১ সালে আলজেরিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের Scientific Council এর চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯২ সালে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্রের ডিরেক্টর হিসেবে পুনরায় কাতার ফিরে আসেন। তিনি জর্ডানের রয়্যাল অ্যাকাডেমি ফর ইসলামিক কালচারাল অ্যান্ড রিচার্জ (Royal academy for Islamic culture and research), ইসলামি সম্মেলন সংস্থা (OIC), রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামি এবং ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টার, অক্সফোর্ড এর সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৪১১ হিজরিতে ইসলামী অর্থনীতিতে অবদান রাখায় ব্যাংক ফয়সল পুরষ্কার লাভ করেন। ইসলামি শিক্ষায় অবদানের জন্য ১৪১৩ হিজরিতে মুসলিম বিশ্বের নোবেল খ্যাত কিং ফয়সাল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন । ১৯৯৭ সালে ব্রুনাই সরকার তাকে ‘হাসান বাকলি’ পুরষ্কারে ভূষিত করে।